তুমি অক্টোপাস ও অন্যান্য কবিতা
তুমি অক্টোপাস
তুমি অক্টোপাস, তুমি আমার টিচার
তুমি গণপাঠাগার থেকে আনা বই,
তুমি আমার রেডলেটার ডে
রাত্রেই পড়ে শেষ করতে হবে তোমাকে।
বুক ভরা সহমর্মিতা নিয়া
বুঝি পদ্মায় ডুব দিলে তোমার দেখা পাব
আমরা যারা অনেক রকম বানান লিখি
এ জীবনের বিভিন্ন সময় থেকে
আমাদের বিভিন্ন বানানে লিখতে দাও
আমরা দেশের সকল জেলায় গেছি, গেছি ৭০ ভাগ উপজেলায়ও
অনেক রকম সকম দেখার অভ্যাস আমাদের আছে
অনেক রকম রান্না ও পরিচারিকার ঘর পরিষ্কার করানোর
অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে
আমাদের কাছে জীবনের অনেক রকম বানান
পছন্দ হয় খুব
নানান রকম আমের মুখ
অনেক রকম পেয়ারার খির
কিশোরীর ভুরু
শ্যামলা নাকের উপর সোনার নাকফুল
কিশোরীর মস্তানি দেখতে ভাল লাগে
রোদে পোড়া মাসল
রেস্তোরায় বসে এখনো কী কিশোর কিশোরী
তর্কে মেতে ওঠে?
ঘুমের বড়ি দিয়ে হ্যান্ডব্যাগ ভরে রাখে?
জানালায় দাঁড়িয়ে তিমির স্বপ্ন দেখি
ভেসে আসে সেই তিমির বমি বা এ্যাম্বারগ্রিস
একটা স্পার্মতিমি সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে এসে কয়েক কেজি অপরূপ বমি করে দেয়
সে বমি তো না, সমুদ্রমন্থনের স্বর্গীয় সুগন্ধ
সে রাত ছিল পূর্ণিমার
তিমির লেজের ইশারায় সাগর থেকে উড়ন্ত মাছেরা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলো গা
একটা পানির ঘুড়ন্ত টানেলের মাথায় ডলফিন হাসতে থাকল।
দুনিয়ার সবচেয়ে ছোট তিমি বামন কোগিয়া দেখা যায় বঙ্গোপসাগরে
শে দুইটা বাচ্চা নিয়া মারা গেছে
কিন্তু কোন এ্যাম্বারিগ্রিস দিতে পারে নাই
ছোট তিমির সুগন্ধ নাই। তার শুধু মৃত্যু আছে। সে গরীব।
বিশাল উপসাগরের সাথে বাঙালির তেমন মিতালি নাই
শুধু দুবলার চড়ে গিয়ে বছরে একবার সূর্যকে সালাম জানাতে যায় মানুষেরা
তিমির সাথে দেখা হয় নাকো!
স্বপ্নে দেখেছিলাম এরকমই হবে
সূর্যাস্তের সময় আকাশ ভরে উঠবে বিদায়ি আলোতে
কিন্তু আমার তা দেখার চোখ তখন থাকবে না
আমি তখন ঘরে বসে তিমির বমি করা ভাববো।
আমরা যে সব ফুল অকারনে ভালবেসে ফেলে দিয়েছিলাম
আমাদের শিশুরা তাই পরম আদরে কুড়িয়ে নিয়ে বড় হতে থাকবে
হয়ত একদিন তারা পেয়ে যাবে সমুদ্রমন্থনের ফল
বঙ্গোপসাগর খুলে দেবে তাদের জন্য নতুন স্বপ্নের একটা দেশ
সেদিন আমরা থাকবো না
আমরা তিমির এম্বারগ্রিস হয়ে বাতাসে সুগন্ধ ছড়াবো।
হাসপাতালে
ভালবাসি তাই বশ্যতা স্বীকার করতে দ্বিধা নাই
হাসপাতাল ছাড়ার আগেই মহাশূন্যের চিত্রময় সর্বশেষ ছবিটা প্রকাশ পেল
আমি ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছিলাম না বলে
তুমি মন খারাপ করে আমার সাথে জেমস ওয়েবে চোখ পেতে ছিলে আর ভাবছিলে
আমি কি আর দম ফিরে পাব না?
তোমরা মহানগরে উল্লসিত তুমি গ্রামে বসে লাল রঙের জাল ফেলতে দেখছ
আমি এর মাঝখানে পড়ে আছি হাসপাতালে
আমি কবি
আমার কোন বন্ধু নাই
আমি বহু দিন ধরে একা
শৈশব থেকে
অনেক নির্জন উপকুলে নায়িকার রূপ দেখে কেটে গেছে বেলা
আমার দুই ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে
আজ ক্লান্ত হৃদয়
মৌসুমি হাওয়া দোলা
কালের গালে একটা চুমু দিতে তৎপর
সর্বদা শুধু বেদিশা
হাসপাতালে
কেন গো আল্লা কিছু ঘাস পাঠালে
এ ধরনীতে আজ সকালে
একটা ইন্দুর কাটে কুট কুট পরমায়ু
আমি হেসে উঠি
ঘাস খাই
চিবুকের দাড়ি কেটে ফেলি
ও মোর দরদী তুমি কই?
আমাদের বৌদি
একবার আমি আমার প্রতিবেশী বৌদির মোবাইল ফোনে একটা হোম স্ক্রিন হয়ে
ঘুরে এলাম কলকাতা, বেড়াতে
মৈত্রি ট্রেনে উঠেই কী যে স্বাধীনতা আমার ভিতর টের পেলাম
বোতলের পানি খেতেই মনে হচ্ছিল গঙ্গাজল খাচ্ছি ঢকঢক করে
কলকাতা স্টেশনে গিয়ে সোজা চলে গেলাম দমদম
প্রতিবেশী বৌদির বোনের বাড়িতে
বোনটি হুবুহু দেখতে বৌদির মত
শুধু আরো বেশি ধর্মপরায়ণ আর হিন্দু হিন্দু
গড়িয়াহাট বুলেভার্ড গিয়ে সেই মোবাইল ফোনটা মন ভরে শাড়ি কিনলো কয়েক দিন
আর মোড়ে মোড়ে দেবতার থানে নমস্কার জানালো ইচ্ছা মত
ইচ্ছা মত কালী ঘাটে গিয়ে কালীমা’র সামনে চোখের জল ঝড়ালো
দক্ষিণেশ্বর গিয়ে সারদা দেবীর কথা স্মরণ করে সারা দুপুর ঘুরে বেড়ালো
বৌদির স্বামী খুব ‘বিবেকানন্দ’ ভক্ত
তাই গঙ্গা পার হয়ে বেলুরমঠ ঘুরে এলো
চোখে পড়ল কত ঘাট কত পথের নিশানা
তারপর সিনেমা হলে প্রসেনজিতের অভিনয় দেখে চোখের জল ধরে রাখতে না পেরে
মনে মনে চলে গেলো পুরী জগন্নাথদেবের মন্দিরে
গয়ায় পিণ্ডদান দিলো, তারপর বৃন্দাবন, গেলো কাশি
সিনেমার সাথে
বেলুরমঠে সান্ধ্য প্রার্থণা ইচ্ছা হলে দক্ষিণেশ্বরে পুজা
চলে যাও কৃষ্ণনগর জংশন হয়ে নবদ্বীপ, সোনার গৌড় মূর্তি দেখে
ইসকনের মায়াপুর ঘুরে ঘুরে সারাদিন
গোশালা দেখে কিছু গোমুত্র পান করে
ফিরে আসো
দমদমে বোনের বাড়িতে ফিরে গিয়ে শাড়ি রেখে ফতুয়া আর ঘাগড়া পড়ে
ঘুরে বেড়াচ্ছিল যখন বৌদি
তখন মনে পড়লো তার ঢাকার কথা
মোবাইলে নাতনির পিক বের করে মনে পড়লো
গত ঈদের ছুটিতে নাতনি নেচেছিল রবি ঠাকুরের পাগলা হাওয়ার ছুটির গানে
তখন দেখলো বৌদি, তার থলিতে টাকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে
মনে যদিও তার কাশ্মীর হয়ে অমরনাথ/কেদার নাথ দর্শনের আশা ছিল
তদুপরি ফিরে এল শে
আবার ঢাকায়, বাংলাদেশে
চরম হিজাব পড়া নারীদের দেশে
ভিন্নরকম বাংলা ভাষায়
ভীষণ মন খারাপ করে
সুটকেস ভরা শাড়ি নিয়া।
আমাদের পাটখেত
আমাদের সম্পর্ক ছিল পাটখেতের মত
অফুরান ভিটামিন ভরা
তাতে ভালবাসার অনেক বায়োআঁশ
কিন্তু হালকা পাটখড়ির মত পলকা
আমরা এখন
সম্পর্কের আঁশ ছাঁড়াতে
জুট মিল বন্ধ করে
পাট শাক খাই দুই বেলা
আর সারাবেলা পরস্পরকে উস্কানি দেই।
দুর্ভিক্ষ
দুর্ভিক্ষ জিজ্ঞেস করে, আমি কি আসবো?
তখন আমি বলি, না এখনো সময় হয় নাই
সাতটা তাজা আর সাতটা রোগা গরুর স্বপ্ন দেখা এখনো শেষ হয় নাই
এখন দেশে কিভাবে ভোট হবে তা নির্ণয় চলছে
এখন আমাদের গরুর হিসাবে সময় নাই।
শৈশবে
স্কুলে থাকতে নাকি আমি এক বন্ধুকে
পানি থেকে তুলে
ডুবে মরা থেকে বাঁচিয়ে ছিলাম।
ভুলে গেছিলাম সে কথা কিন্তু আমাকে অনেক দিন পরে
ও তা মনে করিয়ে দিল।
ওর চোখে ছিল বিমুঢ় কৃতজ্ঞতা
ও কি জীবন ফিরে পেয়ে সুখী হয় নাই?
তারপরেও আমার চোখে
আমি সে বন্ধুর চোখ জোড়া চাই।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন