আত্মজীবনীতে ‘বলা ও না-বলা কথা’

অ+ অ-

 

আদর্শ প্রকাশ করেছে প্রখ্যাত বামপন্থিনেতা ও লেখক মনজুরুল আহসান খানের আত্মজীবনী বলা ও না-বলা কথা। আত্মজীবনী বলা হলে হলেও, বইটিতে তাঁর দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাবলি প্রাধান্য পেয়েছে। মনজুরুল আহসান খানের বইটির শুরুই হয়েছে দেশভাগের ঘটনা দিয়েময়মনসিংহ থেকে কলকাতা, কলকাতা থেকে ঢাকার কাহিনি। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখার কারণে কম বয়সে তাঁকে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ দেওয়া হয়। ছাত্রাবস্থাতেই কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো পড়ে রাজনীতির প্রতি উদ্দীপ্ত হন। রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সে সময় তিনি বস্তি, হোটেল শ্রমিক, কারখানার শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ করেছেন।

বলা ও না-বলা কথা বইয়ে মনজুরুল আহসান খান জীবন ও রাজনীতিকে আলাদা করে দেখেননি। তাঁর সরল ভাষ্য পড়লে মনে হবে, জীবনটাই রাজনীতি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের আগে তাঁর বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। কিন্তু বিয়ের সব আয়োজন উপেক্ষা করে তিনি দেশের জন্য একাত্তরের গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতা-উত্তর দেশের রাজনীতির হালচাল, মুজিব সরকারের শাসনামল, ১৫ আগস্টের ঘটনার প্রতিক্রিয়া, জিয়া সরকারের খালকাটা কর্মসূচিতে সিপিবির যুক্ত হওয়ার বিষয়ে খোলামেলাভাবে লিখেছেন তিনি। বইতে আছে গোপন ও প্রকাশ্যে কমিউনিস্ট পার্টির নানা অজানা তথ্য। প্রথম সারির একজন কমিউনিস্ট ও শ্রমিকনেতা হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভেতর-বাইরে দেখার যে অভিজ্ঞতা, সে সব বিষয় ও ঘটনাকে তিনি জীবনালেখ্য করেছেন।     

বইটি মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রাম, নির্যাতিত খেটে-খাওয়া মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, কমিউনিস্ট আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতার এক খতিয়ান বলা যায়। তাতে যেমন ইতিহাসের উপাদান আছে, ঠিক তেমনি আছে মনজুরুল আহসান খানের নিজের সময়, সমাজ সম্পর্কে আত্মাভিজ্ঞতার প্রতিফলন। ছোট্ট এই বইয়ে ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের রাজনীতি, সমাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির নানা বিষয়ের মূল্যায়ন হাজির করা হয়েছে। বইটিকে বলা যায়, পরিবার থেকে সমাজ, সমাজ থেকে রাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনসহ এককাল পর্বের ছোট্ট ইতিহাস। এটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মিতা মেহেদী। মূল্য রাখা হয়েছে ৩৪০ টাকা।