চর্ব্য চোষ্য [একাদশ পর্ব]
পড়ুন ► চর্ব্য চোষ্য [দশম পর্ব]
চর্ব্য চোষ্য [একাদশ পর্ব]
মিটিং রুম থেকে বের হয়ে আমির যেন বরফ হয়ে গেল। স্বচ্ছতার সাথে কিছুদিন কাজ করলেই শ্রমিকনেতাদের তিনটি প্রতিপক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ। মালিকপক্ষের মধ্যে নাশিতার গতিবিধি নিয়ে চিন্তিত আমির। আগের দিন সে বিচলিত হয়েছিল। ক্ষুব্ধ হয়েছিল। আজ শুধু চিন্তা বাড়ছে।
মাহের বলল, ‘ওই নারী খুব ধুরন্ধর। নানা মহলের সাথে তার যোগাযোগ থাকতে পারে।’
‘নানা মহল মানে কী?’
‘পুলিশ হতে পারে। সরকার দলীয় পাণ্ডারা হতে পারে।’
আমির আশপাশে তাকাল। মাঝে মাঝে সে সারাক্ষণ সাবধান থাকে। একটু পরেই তা আবার ভুলে যায় বটে। শ্রমিকদের উত্তেজিত করতে গিয়ে নিজেও উত্তেজনার মধ্যে ডুব মারে।
আরো পরে মাহের পশ্চিম দিকে ভুরু উঁচু করে হাসি দিল, ‘যাবি নাকি?’
আমিরও হাসল। কিন্তু মানিব্যাগ বের করার পর মুখটা ব্যাজার হয়ে যায়। ব্যাগের মুখ ফাঁকা করে উপুড় করে দেখাল।
মাহেরও মুখ ব্যাজার করে। তবু বাস থামলে সে-ই আগে দৌড়ে যায়।
পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলে তাঁতিবাড়ি। তারপর কামারবাড়ি পার হলে জেলেবাড়ির মাঝ বরাবর রাইন ফ্যাশনের সামনে নামল তারা। কারখানাটার দক্ষিণ পাশের সরু গলি দিয়ে এগিয়ে গেলে বোতাম, হ্যাঙ্গার, ইত্যাদি তৈরির কয়েকটা টিনশেড কারখানার পর ডোবা। ডোবার ওপাশে দোতালা বাড়িটা তাদের গন্তব্য।
সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় উঠে গেলে বড়সড় খোলামেলা পানশালা কাম জুয়াখানা। প্রায় সব টেবিল দখল হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। আমির চকিতে চোখ বুলিয়ে নিল। তার ইয়ার দোস্ত কেউ আছে কিনা। অথবা কোনো সহকর্মী।
এখানে বিচিত্র লোকজন আসে। ঝুটের দালাল আর চাঁদাবাজ বেশি। তারা দেশি চোলাই আর বিদেশি লালপানি দুইটাই খায় আর জুয়া খেলে। কেউ কেউ শুধু পান করে চলে যায়।
আমির-মাহের জানালার ধারে একটা টেবিল খালি পেয়ে বসল। তার পাশে ডোবা। ডোবার চারপাশ দিয়ে শিল্পবর্জ্য। ডোবাটা বর্জ্যের নিচে ডুবি ডুবি করছে। ডোবার মাঝখানে পোড়া মবিলের মত পানি। দোতালা পর্যন্ত যতটুকু গন্ধ ওঠে তা সবাই মাদকতায় মিলিয়ে নেয়। কিন্তু আজ টেবিলটার পাশে জানালার নিচের দিকে কাচ ভাঙ্গা দেখা যাচ্ছে। সেখান দিয়ে বেশি গন্ধ এসে পড়ছে। বিশেষ করে জানালার কাছে।
আমির উঠে দাঁড়াল, ‘আর কোনো টেবিল খালি নেই?’
‘কই? দেখি নে ত?’
মাহের নাক কুঁচকে রাখল। তার ঘাড় শক্ত হয়ে ওঠে। এটা তার রাগের লক্ষণ। আমির আমল দেয় না। সে বরং চোখ বাড়িয়ে পরিচারক খোঁজে।
পরিচারক আসার আগেই এক তরুণ পিকআপ মালিক এসে বসল তাদের টেবিলে।
‘ধর্মঘট কেমন হল, নেতাজি!’
‘এই ত হল আর কি।’
‘আজ সন্ধে লাগতে না লাগতে সব টেবিল দখল হয়ে গেল! কী কেস?’
‘এখনও সন্ধে আছে নাকি?’
আমির মোবাইলে সময় দেখল। রাত সাড়ে নয়টা।
পিকআপ মালিক পকেট থেকে কার্ড বের করতে করতে বলল, ‘দেবেন নাকি এক চাল?’
‘নাহ্! আজ কাজ আছে। শিগগির বার হব।’
জুয়ায় ভক্তি নেই আমিরের। একদিন ঠকার পর মাস ছয়েক আর ছুঁয়ে দেখে না। তারপর আবার একদিন বসে। এভাবে বছরে দুই-তিন দিন। এক-দেড় হাজার ঠকার পর কয়েক মাস আর ঘোলা পানিও খায় না।
আমিরকে দেখেই তরুণ পরিচারক দৌড়ে আসল। ‘শিগগির পলান, বস। আপনাকে মোবাইল করতে যাচ্ছিলাম।’
‘কেন? কী হইছে?’
‘ধর্মঘটের ঘোষণায় পুলিশ নামছে। সরকার ধর্মঘট করতে দেবে না।’
‘কারা ধর্মঘট ঘোষণা করল?’
‘কেন, আপনি কিছু জানেন না?’
আমির অবাক চোখে মাহেরের দিকে তাকাল। মাহেরও কিছু জানে না।
পরিচারক বলল, ‘পুলিশ এসে ঘুরে গেছে। তারা আশপাশে থাকতে পারে। একজনকে ধরে নিয়ে গেছে। ফারুক না কী যেন নাম।’
আমির ঢোক গিলল। এখন জেলে গেলে মুশকিল। আসার সময় পুলিশ দেখতে পায়নি। তখন হয়ত আশপাশে ছিল না। ভাবতে ভাবতে মনে শান্তি পায় আমির। কিন্তু এখান থেকে বের হবার পথে যদি পুলিশ ধরে ফেলে!
মাহের বলল, ‘দূর বাল! পরে যা হয় হোক। এখান থেকে খালি মুখে ফিরতাম না।’
‘হঅ। তাই ত। কিসের বালের পুলিশ-ঠুলিশ!’
পরিচারক মুচকি হেসে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসল প্লাস্টিকের বোতলে ঘোলাটে চোলাই নিয়ে। আর দুইটা প্লাস্টিকের মগ। প্লাইউড টেবিলে রাখার সাথে সাথে আমির ঘ্রাণ শুঁকে দেখে।
পরিচারক বলল, ‘আজকের মালটা খুব কড়া। আস্তে টান দিয়েন।’
‘হঅ। এই দেখ কেমনে আস্তে করি।’
আমির বোতলের মুখ খুলে ছাদের দিকে তাকিয়ে হাঁ করল। ভগভগ করে ঢেলে দিল প্রায় অর্ধেক।
পরিচারক ভয় পায়। তবে মাহের হাসে।
আমির বোতলটা টেবিলে রেখে চোখ বড় করে তাকাল। মাহের বোতলের দিকে হাত বাড়ালে আমির তর্জনী তুলে বলল, ‘এএই! হাত দিবি নে কিন্তু!’
‘এত গিলিস নে, বাঞ্চত! ইদানীং শুনি যে এতে নাকি মিথানল, ইউরিয়া আর আরো কী কী মেশায়!’
‘তাই নাকি?’
‘হঅ। এতে বেশি নেশা হয়। শিগগির নেশা হয়।’
‘তাই ত কই। এত মজা কেন।’
‘মজাও বেশি মরণও বেশি। সেদিন কয়জন মরল শুনলি নে? কতটুকুতে কতটুকু মেশায় তার কি ঠিক আছে নাকি?’
মাহের চোখ দিয়ে ইশারা করলে পরিচারক চলে যায়। মাহেরের জন্য আলাদা এক বোতল নিয়ে আসবে। তবে তার ফেরার আগেই আমির আকাশ ভ্রমণ শুরু করে। পাখির মত ঘুরতে ঘুরতে লাটিম হয়ে যায়। তারপর ঘুরতেই থাকে।
পরিচারক আরেক বোতল নিয়ে আসল। খুলতে গিয়ে থামল মাহের। আমির এক বোতল শেষ করতে পারবে বলে তার মনে হচ্ছে না।
আমির বলল, ‘কওওই কঅঅয় মঅঅল—!’
‘কী হল রে?’
‘মঅঅলও—,’ আমির বলছে কোথায় কয়জন মরল।
মাহের মুচকি মুচকি হাসছে।
আমির সামনে ঝুঁকে পড়ল। টেবিলে নাক ছুঁইছুঁই। তবু বোতলটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। মাহের বোতল ধরে টান দিল। আমিরের আঙ্গুল বাঁকিয়ে ছুটিয়ে দিল। আমির মাথা তুলছে না।
মাহের বলল, ‘আর একটু গিলবি নাকি?’ সে বোতলের মুখ এগিয়ে নিল আমিরের মুখের সামনে। তার মজা লাগে।
আমির চুপ।
মাহের কয়েক চুমুক গিলে সিগারেট ধরাল। তার মনে পড়ল আমির ধরায়নি। এমনটা আগে কখনও ঘটেনি।
‘কিরে, বিড়ি খাবি নে?’ মাহের আরো হাসে।
আমিরের সাড়া নেই।
মাহের আরেকটা চুমুক দিল। তারপর আমিরের থুতনি ধরে উঁচু করল। ‘কি রে? হয়ে গেল নাকি?’
আমির সোজা হয়ে বসল। তার চোখ ঢুলুঢুলু করছে। কোটর থেকে যেন বের হয়ে আসতে চাইছে। আরো অনেকক্ষণ পরে তার মাতাল মুখ ধীরে ধীরে চালু হয়। ‘এইটা ত মাগার বিদেশি মাল ফেল!’
‘তয় আর এক চুমুক দিয়ে মর!’
‘হুম! মানুষ ত মাগার চুমুক দিয়েই মরে। উউমম—!’
আমির বোতল ধরলেও মুখ পর্যন্ত তুলতে পারল না। হাতটা যেন বগল থেকে খুলে পড়ল। বোতল কাত হবার আগেই মাহের ধরে ফেলে।
পরিচারক দৌড়ে আসল, ‘বস, পুলিশ!’
‘উউম? ওও—পুলিশ। পুলিশরে দিস নাই ত। ইটটু মাল দিয়ে দে।’
‘পরশু দিন কুড়ি হাজার নিয়ে গেল। আজ মনে হয় নেতাদের ধরার জন্য আসছে।’
‘আমাকে ধরবে কেন? আমি কি চোর না ডাকাত, হুম? চল দেখি পুলিশরে একটা চোদন দিয়ে আসি!’
‘হঅ। বুঝছি।’ মাহের বলল।
আমির দরজার দিকে পা বাড়ায়। মাহের আর পরিচারক তাকে ধরে নিয়ে যায় কিচেনে। পেছন দরজা দিয়ে বের হলে ভাঙ্গা সেপটিক ট্যাংক। তার পাশে আমিরকে বসিয়ে রাখে।
আমির বলল, ‘এটা কি জাহান্নাম নাকি জান্নাত গো?’
‘এটা জান্নাত, মাদারচোত! কথা বলিস না!’
‘ঠিক আছে আললা আব্বা। আমি অহন—!’
‘আজকের মালটা একেবারে ডেনজারাস। একই মাল একএক দিন একএক ভাব। কবে যে বাল তোরা কী দিয়ে খুন করিস!’
মাহের বিরক্ত। পরিচারককে একটা ধমক দিতে গিয়ে চেপে থাকল।
পরিচারক বলল, ‘এসব বাদ দিয়ে বিদেশি খান, বস। কম খান সেও ভাল।’ বলেই সে চলে গেল। মিনিট দশেক পরে ফিরে এসে বলল, ‘পুলিশ না। ম্যাস্টেড আসছে, বস।’
‘উউম—ইটটু মাল দিয়ে দে।’
‘মালিক কথা বলছে। আপনারা আজ চলে গেলে ভাল হয়।’
‘কেমনে যাব? মুনকার নাকির খাড়া হয়ে আছে না?’
‘ওই পাশ দিয়ে যাবা ক্যান, বাল? এই পাশ দিয়ে যাও!’ পরিচারক বিরক্ত হয়ে আপনি থেকে তুমিতে লাফ মারল।
মাহের-আমির ডোবার পাশ দিয়ে পা বাড়ায়। দূর থেকে আসা হালকা আলোয় নর্দমা উপচানো পানি দেখা যাচ্ছে না। ফটফটি চুয়ে পা ভিজে গেলে টের পায়। মাহেরের রাগ লাগে।
আমির জড়ানো গলায় বলল, ‘আমরা অমৃত ধারায় পা ধুচ্ছি, হুম?’
‘হ বাঞ্চত! চুপ থাক।’
‘জি, আললা আব্বা। আমরা কখন বেহেশতে যাব, আব্বাজান?’
আমির টলতে টলতে হাঁটছে। মাহেরের ভয় লাগে। আমিরকে সে আগে কোনো দিন এমন টালমাটাল হতে দেখেনি। মাহের তার হাত ধরে রাখে আর আশপাশে চায়। একটা রিকশা-টিকশা কিছু হলে ভাল হয়।
নেই।
বরং নয়-দশজনের একদল তরুণ-যুবা দৌড়ে আসছে। উত্তেজিত ভঙ্গিতে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। দুইজনের হাতে লাঠি। একজনের হাতে হকিস্টিক। আরেক জনের হাতে রামদা।
ফটটাশ!
পিস্তলের শব্দ। মহাসড়কের কাছ থেকে হট্টগোল ভেসে আসছে।
‘কী হল?’
আমির লাফ দেয়। নেশার ঘোরের মধ্যেই মহাসড়কের দিকে দৌড়।
মাহের কাঁপছে। সে নিশ্চিত ওখানে মারামারি হচ্ছে। হয়ত খুনোখুনি কিছু একটা হচ্ছে। আমির এখনও বুঝতে পারেনি। মাহের আমিরের হাত ধরে বোঝাতে চায় যে, এই এলাকাটা তাদের না। আমির জানত বটে। তাদের এখন পেছনের গলি দিয়ে ঘুরে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমির আবার দৌড় দিল। হাঙ্গামা বাধলে সে বরাবরই ছুটে যায়। বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করে।
গলির মাথায় মহাসড়কের পাশে সামাউল নিটওয়্যার। কারখানার গেটের কোনায় জনা দশেক উত্তেজিত তরুণ-যুবা। তাদের সামনে এক যুবক চিত হয়ে শুয়ে আছে যেন। তার বুকের ডান পাশটা স্যাঁতসেঁতে লাল। হালকা আলোয় লাল তরল কালো দেখাচ্ছে। ক্ষীণ ধারা বাহুর নিচে দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ইটের খোয়ার ফাঁকে ফাঁকে টিমটিম করতে থাকা দুর্বাঘাস ভিজিয়ে দিচ্ছে। পাশেই একটা কাঁচাপাকা চুল ভরা মাথা পড়ে আছে।
‘কে রে? রইজ নাকি?’ আমিরের গলা কাঁপতে লাগল। পড়ে থাকা মাথাটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।
উত্তেজিত তরুণ-যুবাদের কয়েকজন আমিরের পরিচিত।
লম্বা এক যুবক বলল, ‘এক ভাই খুন হয়েছে। আমি ওদের দুইটাকে খুন করব! না হলে আমি মর্দ না।’
‘ওরা কারা?’
‘ফকা গ্রুপ!’
উত্তেজনায় আমিরের নেশা অনেকখানি কেটে গেল। এখন তার অস্থির লাগছে। জেলেবাড়িতে তার আর দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে না। জেলেবাড়িতে জেলে নেই। কামারবাড়িত কামার নেই। তাঁতিবাড়িতে তাঁতি নেই। এখন আছে শুধু কারখানা আর শ্রমিক। আর আছে চাঁদাবাজ আর ঝুটের দালাল।
ফকা জেলেবাড়ির সবচাইতে বিপজ্জনক ঝুটের দালাল। এককালে রইজ ছিল তার দোস্ত। দুইজনই পোশাক কারখানার ঝুট কিনে তুলোর কারখানায় বেচত। কয়েক মাস আগে ফকা নিজেই তুলোর কারখানা দিয়েছে। এখন জেলেবাড়ির সব ঝুট সে একা চায়। সেজন্য অবশ্য সে খানিকটা ছাড় দিয়েছে। জেলেবাড়ি থেকে সে আর চাঁদা নেয় না। সে এখন শিল্পপতি হতে চায়। ঝুট ধুনে তুলো করার ব্যবসা জমে উঠেছে। কিন্তু ঝুটের অভাব পড়ছে।
রইজ শুধু চাঁদা আদায় করে খুশি হতে পারছিল না। সে ঝুট কিনে অন্য জায়গায় পাঠাচ্ছিল। হালার পুত বেশি লাভ করতে চাচ্ছিল।
আমির কী বলে পা বাড়াবে তাই ভাবে। এরই মধ্যে পুলিশের গাড়ি সাইরেন দেয়। গাড়িটা কাছাকাছি আসতেই এক চ্যাংড়া বাদে সবাই দৌড়ে গলির ভেতর গিয়ে পালিয়ে থাকে। এই সুযোগে মাহের-আমিরও সটকে পড়ে। পুলিশের গাড়ি আসার আগেই তারা জেলেবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে যেতে চায়। পুলিশ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবে, ‘ওই দিকে হৈচৈ শুনলাম।’
বাসস্ট্যান্ড একেবারে ফাঁকা। হঠাৎ করেই ফাঁকা হয়ে গেছে।
পুলিশের গাড়ি আর একটা বাস একসাথে এসে পড়ল। দুইটা দুই দিক থেকে। মাহের বলল, ‘ফকার সাথে রইজদ্দির গোণ্ডগোল ছিল যে—।’
‘মার কাছে মামবাড়ির গপ্প, হুম?’
আমির ভাল করেই বুঝেছে কী থেকে কী হয়েছে।
মিনিট খানেকের মধ্যে বাসটা ফিঙ্গেবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে থামল। সেতুর সামনে দোকানগুলো যথারীতি খোলা আছে। শোরগোল চলছে।
‘একটু চা খাই।’
‘না বাল। খিদে লাগছে। ভাত খাব।’
তারা সিগারেট ধরাতে ধরাতে পা বাড়ায়। দোকানের সামনের গলি দিয়ে। কারুকি গার্মেন্টস কারখানার পুব পাশ দিয়ে তুরাগ নদের তীর ধরে। একটু পরে সারি সারি টিনশেডের মধ্য দিয়ে সোয়া মাইল গেলে মাহের আর আমিরের কাছাকাছি বাড়ি।
‘ক্রিং! ক্রিং!’
আমিরের মোবাইলে রিং। মনিটরে ‘রাফিদুল’ দেখেই মিটিংয়ের কথা মনে পড়ে তার। এখন তাদের মিটিংয়ে থাকার কথা ছিল। বড় ধর্মঘটের ব্যাপারে আলোচনা হবে।
আমির বলল, ‘আসছি।’
‘শিগগির আসেন বাল। আপনার সব সময় দেরি হয়। আর আমরা আপনার জন্য বসে বসে ধোন চুষি।’
‘হ। আস্তে চোষ। আমি আসছি।’
লাইন কেটে দিল ফিঙ্গেবাড়ি শ্রমিক পরিষদের সেক্রেটারি রাফিদুল।
মাহের বলল, ‘আমি ভাবলাম যে আজ মনে হয় মিটিং-টিটিং হবে না।’
‘হবে না কেন?’
‘কেন জানি মনে হল।’
‘তোর মন আর হাঁসের ধোন। কেন মনে হল ক দেখি?’
‘কেন মনে হল তা কার ধোনে জানে।’
ফিঙ্গেবাড়ি মোড়ের সামনে তালিম মটর গ্যারেজ। তার পেছনে জাতীয় শ্রমিক ইউনিয়নের ফিঙ্গেবাড়ি শাখার ছাপড়া অফিস। ফিঙ্গেবাড়ি পোশাক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ ধর্মঘট ডেকেছে। তাতে তারা যোগ দেবে কিনা সেই আলোচনা তারা রাতেই শেষ করতে চায়।
► আসছে দ্বাদশ পর্ব
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন