চর্ব্য চোষ্য [দ্বাদশ পর্ব]

অ+ অ-

 

পড়ুন  চর্ব্য চোষ্য [একাদশ পর্ব]

চর্ব্য চোষ্য [দ্বাদশ পর্ব]

নাশিতা গাড়িতে বসে চিন্তা করছে। গাড়িটা আশুলিয়ার জামবাড়ি এলাকায় জামতলায় দাঁড়িয়ে আছে। ভাওয়াল লেডিজ ফ্যাশন থেকে আধা কিলো দূরে। লেডিজের সামনে আশপাশের গোটা তিনেক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে।

লেডিজের জনবল ব্যবস্থাপক বলল, আপাতত ভাড়াটে নেতাদের দিয়ে শ্রমিকদের কারখানায় ফেরানো যেতে পারে।

তা ত যেতেই পারে। এত দিন ত তা-ই করেছেন। তাতে ত অবস্থার স্থায়ী পরিবর্তন হয়নি। নাশিতা ভাবছে বিকল্প কিছু।

জি, ম্যাম!

ভাড়াটে নেতারা যা করে তাতে ছাই দিয়ে আগুন চাপা দেওয়া হয়। শ্রমিকরা কাজে ফেরে কিন্তু মনের মধ্যে অসন্তোষ জিয়ে থাকে। কয়দিন পরে আবার আগুন জ্বলে।

জি, ম্যাম!

টেকসই কিছু দুই-চার দিনের কাজ না তা ঠিক। তবু আজই আমরা শুরুটা করতে চাই। অন্তত সেই চেষ্টাটা করব।

জি, ম্যাম!

নাশিতা চুপ থাকল অনেকক্ষণ। আজ পরিস্থিতি অন্য রকম। গত কয়দিন সে মিটিংয়ের আয়োজন করে তারপর এসেছে। তাও সেসব ছিল শুধু ভাওয়ালের বিষয়। আজ এসেছে সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখতে।

আরো কিছুক্ষণ চিন্তার পর গাড়ি থেকে বের হয় নাশিতা।

খোলা আকাশে সাদা রোদ ঝ-ঝা করছে। জামতলা থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় এক কিলো রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই। পুলিশ আটকে দিয়েছে। আর শ্রমিকরা তিন কারখানার সামনে মৌচাকের মত দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ তাদের সরানোর চেষ্টা করছে। নাশিতা জানে এই প্রক্রিয়ায় দিন চলে যায়। সেদিন আর কারখানা চালু হয় না।

নাশিতা লেডিজ ফ্যাশনের ব্যবস্থাপকদের চিন্তা করতে বলল। আপনাদের সৃজনশীল হতে হবে। ম্যানেজারের কাজ ম্যানেজ করা। শুধু কাগজে-কলমে কিরানিগিরি করা না।

জি, ম্যাম!

এক ব্যবস্থাপক বলল, সিনিয়র শ্রমিকদের কাজে লাগানো যায়।

তা যেতে পারে, নাশিতা নিজেও এমন কিছু ভাবছিল। কিন্তু সে সরাসরি কাজ করবে না। এমনকি তাৎক্ষণিক কোনো পরামর্শও দেবে না। সে আগে স্টাডি করবে। তারপর পরিকল্পনা তৈরি করবে। তাৎক্ষণিক সব কাজ করাতে হবে ব্যবস্থাপকদের দিয়ে। ব্যবস্থাপকরা সব সময় কারখানায় থাকে। কারখানার আশপাশে বাস করে। তারা শ্রমিকদের মন বোঝে।

ব্যবস্থাপকরা লেগে পড়ল। তারা সুপারভাইজারদের ফোন করল।

কোনো সুপারভাইজারের কাছে কোনো শ্রমিকের মোবাইল নম্বর নেই।

ব্যবস্থাপকরা অসহায় হয়ে পড়লে নাশিতা বলল, সুপারভাইজাররা সরাসরি শ্রমিকদের সাথে কাজ করে না?

জি, ম্যাম!

তাহলে তাদের কাছে কোনো শ্রমিকের সেল নম্বর থাকবে না কেন?

জি, ম্যাম!

মানে কী?

ব্যবস্থাপক থতমত খেয়ে ঢোক গিলল। সে ভুল করে জি ম্যাম বলে ফেলেছে। নাশিতা বলল, আমি মিলিটারি অফিসার না। আমাকে অত জি ম্যাম জি ম্যাম করতে হবে না।

জি!

নাশিতার রাগ হতে লাগল। মুখ শক্ত করে রাখল কিছুক্ষণ। ভালমত শাল্টিং দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু শাল্টিং না দিয়ে সে বরং অনুরোধ করল, কোনোভাবে কি ব্যবস্থা করা যায়?

বায়োডাটায় শ্রমিকদের মোবাইল নম্বর আছে, ম্যাম। কিন্তু খুঁজতে দেরি হয়ে যাবে।

খুব বেশি দেরি হবার ত কথা না। বেশি হলে আধা ঘণ্টা।

জি, ম্যাম!

আমির আলিকে চেনেন?

জি! শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে বেড়ায়।

ওনার নম্বর আছে কারুর কাছে?

নেই। এই কারখানার ব্যবস্থাপকরা সমস্যার সময় অন্য নেতাদের ডাকে। সেই নেতাদের কাছে কোনো সিনিয় শ্রমিকের সেল নম্বর থাকতে পারে, বলল নাশিতা। কিন্তু সে ওই ঘুরপথে গেল না। তার আইফোনে আমিরের নম্বর আছে। বের করে দিয়ে বলল, ওনার সাহায্য নিতে পারেন। ওনার কাছে শ্রমিকদের নম্বর থাকতে পারে।

জি, ম্যাম।

আগামী তিন দিনের মধ্যে যার যার কারখানার চার পার্সেন্ট শ্রমিকের নম্বর সংগ্রহ করবেন। সিনিয়র শ্রমিকদের নম্বর।

জি, ম্যাম!

সেগুলো আমাকে মেইল করেন। আর আপনাদের সেলফোনে সেভ করে রাখবেন।

জি, ম্যাম!

নাশিতা ল্যাপটপে ইংরেজিতে নোট লিখল: শ্রমিকদের সিভি ও প্রোফাইল ডিজিটালাইজ করা যেতে পারে। সদর দপ্তরের মত।

ভাওয়ালের সব পোশাক কারখানা ঢেলে সাজানোর জন্য নানা রকম নোট নিচ্ছে নাশিতা।

অল্পক্ষণেই দুএকজন করে সিনিয়র শ্রমিক জামতলায় এসে দাঁড়ায়। ব্যক্তিগতভাবে কোনো শ্রমিকই ব্যবস্থাপককে না বলতে পারে না। তাছাড়া এত দ্রুত মালিকপক্ষের সাড়া পেয়ে তারা খুশি।

নাশিতা বলল, ভাওয়ালের সব কারখানায় মাস খানেকের মধ্যে বেতন বাড়ার ঘোষণা আসবে। সব কারখানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। যেখানে সমস্যা আছে সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের কারখানায় কাজের সময় কেউ মারা গেলে আমরা এক মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকি যা আপনারা জানেন। আগামী মাস থেকেই ক্ষতিপূরণ দ্বিগুণ করা হবে। এখন আপনারা যদি কাজ বন্ধ করে রাখেন তাহলে আমরা সবাই বিরাট সমস্যার মধ্যে পড়ে যাব।

এমন নানা কথা বলতে লাগল নাশিতা যেসব সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে সে জানে।

কিন্তু ছয়জন সিনিয়র শ্রমিক অনেক চেষ্টা করেও তরুণ শ্রমিকদের কাউকেই রাস্তা থেকে সরাতে পারল না। কোনো শ্রমিকই সিনিয়র শ্রমিকদের পাত্তা দিল না।

নাশিতা বলল, সড়ক অবরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছে কে?

কেউ না, ম্যাম! শ্রমিকরা নিজেরাই সবাই রাস্তায় নেমে পড়েছে!

অসম্ভব। এর পেছনে কেউ-না-কেউ আছেই।

নাশিতা কয়েকজন ব্যবস্থাপককে যেতে বলল শ্রমিকদের কাছে।

ব্যবস্থাপকরা ইতস্তত করে। তাদের ভয় লাগে। নাশিতা বলল, কী সমস্যা? শ্রমিকরা মার দেবে নাকি?

শ্রমিকরা এখন ক্ষুব্ধ হয়ে আছে, ম্যাম। তাছাড়া মারধর করারও রেকর্ড আছে। মাস তিনেক আগে, ১০ মার্চ সাভার ইপিজেডের এক কারখানার ভেতরে কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে মার দিয়ে আটকে রাখে শ্রমিকরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের হাসপাতালে নেয়।

নাশিতা নিজে শ্রমিকদের সাথে কথা বলবে কিনা ভাবল কিছুক্ষণ। শেষ পর্যন্ত বলল না। তাৎক্ষণিকভাবে ভাল কিছু করা যায় না। তাছাড়া সে নিজে সরাসরি কিছু করতেও চায় না।

ব্যবস্থাপক বলল, পুলিশকে বললে তারা শ্রমিকদের আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করবে।

সেজন্য আরো একটু দেরি করতে চাই।

পুলিশ নিয়ে নাশিতার অ্যালার্জি আছে। সে যত পুলিশকে কাছ থেকে দেখেছে তারা সবাই অতিশান্ত। মাটির মূর্তি যেমন। আবার তাদের বদনামের শেষ নেই। তাহলে তারা কী করে, কিভাবে করেনাশিতা জানে না। আরো খানিক চিন্তা করে সে বরং ভাড়াটে নেতাদের প্রসঙ্গ তুলল। ভাড়াটে নেতারা কারা?

ব্যবস্থাপকরা কয়েকজনের নাম বলল যারা ভাওয়ালের না।

ভাওয়ালের কেউ নেই?

না, ম্যাম!

আমির কি এখানেও উস্কানি দেয় নাকি?

সাভার উপজেলার সব জায়গায় দেয় বলে আমাদের ধারণা।

তাহলে ত তার কথা শুনবে শ্রমিকরা।

শুনতে পারে।

তাকে ডাকা যায়?

একজন মার্চেন্ডাইজিং ব্যবস্থাপক বেশি আগ্রহ দেখাল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার চাপ তাকেই বেশি সামলাতে হয়। অন্য ব্যবস্থাপকরা গা ঢিলা দিলেও বিশেষ চোখে পড়ে না।

আমির আসল আধা ঘণ্টা পরে কিন্তু সে আলোচনায় বসল না। শ্রমিকদের সে সব সময়ই রাস্তায় দেখতে চায়। তার কারখানাও বন্ধ রয়েছে। অঘোষিত ধর্মঘট চলছে। আর আমির ছুটে ছুটে এখানে-ওখানে যাচ্ছে। সব শ্রমিককে উত্তেজিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নাশিতা গম্ভীর হয়ে রইল। ওদিকে তার গা ঘামতে শুরু করেছে। এখন রাগ লাগছে। গাড়ির ভেতর গিয়েও বসে থাকা যাচ্ছে না। তাতে অধস্তনদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। কাজের পরিবেশ খারাপ হয়ে যেতে পারে।

রোদ তেতে উঠেছে। জামগাছের ছায়াটা রাস্তা থেকে সরে ডোবার ওপর উবু হয়েছে। নাশিতা চিন্তা করতে করতে গাছের গোড়ায় গিয়ে দাঁড়াল। ডোবাটা বেশ বড়। ওপাশে গ্রাম। সারে-বেসারে টিনশেড বাড়ি। দুইতালা, তিনতালা। পাঁচ-ছয় তালাও আছে অনেক।

নাশিতা এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। এটা তার পেশি ঢিলা করার পদ্ধতি। গাছের ডালপাতা দেখলেও তার মন ফুরফুরে হয়। আর ডালে যদি পাখি থাকে তাহলে ত কথাই নেই। তার ছবিও না তুললেই নয়। শৈশব থেকে প্রায় সব সময় তার কাছে একটা ক্যামেরা থাকে। ক্যামেরাঅলা ফোনসেট আসার পর কাজটা সহজ হয়ে গেছে।

জামের ডালে দাঁড়িয়ে থাকা একটা পাখির বোকা বোকা ভঙ্গিতে নাশিতার মনে খুব সুখ হল। ক্যামেরা তাক করার আগে সে আপন মনে হেসেও ফেলল। পাখিটা দুই পা দুই দিকে দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁ করে আছে। ঠোঁট আর চোখের কোনা উজ্জ্বল হলুদ। গলা আর ঘাড় থেকে মাথার তালু পর্যন্ত মেটো কালো। বাকি দেহ বাদামি। পা-ও ঠোঁটের মত উজ্জ্বল হলুদ। নাশিতা পাখির রচনা লেখার মত বর্ণনা করছিল। মনে মনে। ক্যামেরা ক্লিক করার আগেই পাখিটা ফুরুত করে উড়ে গেল। তাতে তার মনে যেন আরো সুখ হয়। হিহি করে হাসতে ইচ্ছে করে। হাসার আগে সে শ্রমিক-কর্মীদের দিকে তাকাল। ডেকে আনা সিনিয়র শ্রমিকরা উসখুস করছে। ব্যবস্তাপক ও অন্য কর্মীরা নির্বিকার। তারা নাশিতার কাছে কিছু শোনার অপেক্ষায় আছে।

ব্যবস্থাপক বলল, ম্যাম, আমরা কি এখন কোনো ভাড়াটে শ্রমিকনেতার সাথে যোগাযোগ করব?

নাশিতা এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না। সে বরং পাল্টা প্রশ্ন করল, যেসব শ্রমিকনেতা সাধারণ শ্রমিকদের শান্ত রাখতে পারে তাদের ছাঁটাই করেন আবার সমস্যার সময় তাদেরই ভাড়া করেন। কী রহস্য?

চাকরিতে রাখলে এই শ্রমিকনেতারা সারাক্ষণ সাধারণ শ্রমিকদের উস্কানি দেয়। সব সময় সমস্যা লেগে থাকে।

কিভাবে উস্কানি দেয়? কোনো রেকর্ড আছে? ডকুমেন্টারি প্রতিবেদন?

তৈরি করা নেই।

তৈরি করে ফেলেন। কত দিনে দিতে পারবেন?

ব্যবস্থাপক মহাবিপদে পড়ল। ম্যামকে না বলার সাহস নেই। আবার কাজটা করতে হলে তাকে অশেষ কাঠখড় পোড়াতে হবে। অথচ এই কাজের সে কোনো সুবিধা দেখতে পাচ্ছে না।

নাশিতা শ্রমিকদের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। কী চিন্তা করছেন, আমির ভাই?

তেমন কিছু না। কী হচ্ছে তাই ভাবছি।

প্রথম মিটিংয়ের পর থেকে আপনার কথা ভাবছি।

আমির অবাক হয়। ঢাকার কোনো অফিসার তাকে নিয়ে ভাবতে পারে তা যেন চিন্তাই করা যায় না।

নাশিতা বলল, এই কয়দিন আমি আরো অনেক শ্রমিকনেতার সাথে কথা বললাম। তারা কোনো কিছু আলোচনায় আগ্রহী না। আমি এর কোনো কারণ বুঝতে পারলাম না।

এই নেতারা কারা? কারুর নাম যদি বলতেন!

নাশিতা কয়েকজনের নাম বললে আমিরের চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠল। বলল, তারা নেতৃত্ব বেচার ব্যবসা করে। ভণ্ড নেতা।

আপনার মত যারা আসলেই শ্রমিকদের ভাল চায়যারা মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক ভাল চায়এমন কয়েকজনের সাথে আমি একটা মিটিং করতে চাই। আপনি যদি আমাকে একটু সহযোগিতা করেন

আমি কিভাবে সহযোগিতা করব তা যদি বলেন

তাদের ডেকে একটা মিটিং আয়োজন করতে হবে।

আমির তা করতে পারে। সে চট করে রাজি হয়ে গেল। নাশিতা যদি সত্যি সত্যি ভাল কিছু করতে চায় তাহলে সে সহযোগিতা করতে একপায়ে খাড়া।

জনবল ব্যবস্থাপক এসে বলল, পুলিশ ফোন করছে, ম্যাম। আলোচনায় বসতে বলছে।

নাশিতা ব্যবস্থাপকদের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিল। আপনাদের যেটা ভাল মনে হয় সেটা করবেন। তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত আমার দেওয়ার কথা না।

পুলিশ হ্যান্ডমাইকে শ্রমিকদের বলছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ আপনাদের ডাকছে। আপনারা আলোচনার টেবিলে যান। সড়ক থেকে সরে যান। জরুরি ওষুধের গাড়ি আটকা পড়েছে। অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়েছে।

শ্রমিকরা অত সহজে গলে না। অনেকের বরং পুলিশের ওপর রাগ হয়। তারা বিক্ষোভ দেখায়। অথচ পুলিশের আর সময় নেই। সড়ক ফাঁকা করার চাপ আছে তাদের ওপর।

নাশিতা কারখানায় যাবে কিনা ভেবে পাচ্ছে না। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হবার আশঙ্কা আছে। মাঝে মাঝেই কর্মকর্তাদের জিম্মি করে শ্রমিকরা। অবশ্য অল্প আশ্বাসে জিম্মি দশার অবসান ঘটে। জিম্মি করা শ্রমিকদের উদ্দেশ্য না। হঠাৎ ক্ষোভের বশে জিম্মি করে। নাশিতা ঝুঁকি নিতে চায় না। কারখানার চাইতে বরং জামতলায় দাঁড়াতে খারাপ লাগছে না। শুধু একটু গা ঘামছে এই যা। ঘামুক একদিন একটু। ব্যায়াম করলে ত ঘামেই। দৈনিক রাতে ব্যায়াম করে সে। ঘাম না ঝরা পর্যন্ত করে। তারপর আবার ওজন মেপে দেখে। মাঝে মাঝে ফিতে দিয়ে মেপে দেখে উঁচু-নিচু সব ঠিকঠাক আছে কি নেই। না থাকলে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়।

ব্যবস্থাপক বলল, আমরা অফিসে গেলাম, ম্যাম!

জি!

নাশিতা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৌচাক হয়ে থাকা শ্রমিকদের ওপর নজর রাখছিল। তার চোখের সামনে গাছের ডালে মৌচাকের ছবি ভাসতে লাগল। হঠাৎ করে মৌচাকে মধু থাকে মনে পড়লে একটু অস্বস্তি হয়। ভাবনাটা অবচেতন মন থেকে সচেতন মনে প্রায় এসে পড়েছিল। মৌচাকে কেউ ঢিল মারল যেন। মৌমাছিরা দিগবিদিক ছুটতে শুরু করল। তাদের পাছে পাছে পুলিশ। তারা কি দুই-চারটা মৌমাছি ধরতে চায়? অস্বস্তি হাসিতে গড়াল। নাশিতা মনে মনে হেসে আইফোনের ক্যামেরা অন করে। সাথে সাথে ফেবুতে আপলোড করে ক্যাপশনে লেখে, পুলিশ মৌমাছি ধরতে ছুটছে! তবে পোস্ট করার আগেই সে সচেতন হয়ে ওঠে। এটা কৌতুকের বিষয় না, সে জানে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলল, ম্যাম, আপনি গাড়িতে বসলে ভাল হয়। সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারে।

তাই ত মনে হচ্ছে।

নাশিতা গাড়িতে গিয়ে বসল।

স্বস্তি।

গা এখনও বেশি ঘামেনি। ঘামলে ভাল লাগবে না। কতক্ষণ বাইরে থাকতে হবে তার ঠিক কী। হয়ত সন্ধে হয়ে যাবে। হয়ত রাত হবে। আজ সে সারাদিন এখানে থেকে দেখতে চায় কে কী করে।

আসছে ত্রয়োদশ পর্ব