সভ্যতার সংকট ও দিগ্দর্শী রবীন্দ্রনাথ

মৃত্যুর আগে আগে সবার সামনে এমন কিছু কথা প্রকাশ করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ যা তাঁর কাছে—শরীর-মন উভয় কারণেই—ছিল চূড়ান্ত আর মর্মান্তিক। সেই কথাগুলো প্রকাশিত হয়েছে ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে, যার স্থানে স্থানে রয়েছে এক দিগ্দর্শীর ব্যথিত বয়ান। প্রবন্ধটি পড়ে নিলে বোঝা যায়, এটি তাঁর জন্য ছিল ভারমুক্তি আর দায়পূরণের উদাহরণ আর আমাদের জন্য পরোক্ষ দিগ্দর্শনের অনন্য নজির। শুরুতেই বলেছিলেন, আশি বছর পূর্তিতে তাঁর জীবনক্ষেত্রের বিস্তীর্ণতা সামনে প্রসারিত আর একদিন পূর্বতম দিগন্তে যে-জীবনের শুরু হয়েছিল তা ‘নিঃসক্ত’ দৃষ্টিতে তিনি দেখতে পাচ্ছেন। এই ‘নিঃসক্ত’ শব্দের জোরে এ-কথা বলা যায়, তাঁর ফ্রেমে-বাঁধা জীবনক্ষেত্রকে তিনি নিজেই তৃতীয় কোনো দ্রষ্টার নির্মোহ চোখ নিয়ে দেখছেন আর ভাবছেন কীভাবেই-না সেই জীবন দেশের মনোবৃত্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল!
যে-অবস্থা থেকে আর উন্নতি হয়নি, সে-অবস্থায়, মৃত্যুর মাত্র তিন মাস আগে, এই প্রবন্ধটি নিজে পড়ে কি শোনাতে পারতেন রবীন্দ্রনাথ? দুর্বল শরীরে বিশ্বাস-ভঙ্গের চাপা প্রতিক্রিয়া, অভিমান, দীর্ঘশ্বাস, আফসোস আর অনিশ্চিত আশাবাদের মোকাবেলা করাটা তাঁর জন্য মুশকিলই হতো। আমরা জেনেছি রবীন্দ্রনাথের হয়ে সেটি পড়েছিলেন ভারতাত্মা-সন্ধানী ক্ষিতিমোহন সেন। রবীন্দ্রনাথ তো নানা সময়ে নিজের পরিমণ্ডলের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রীতি ও শ্রদ্ধাবশত নানা মত প্রকাশ করে গেছেন, প্রকাশ করেছিলেন বলেই না তাঁকে পরবর্তী সময়ে স্বজাতির জন্য লিখতে হয়েছে ‘সভ্যতার সংকট’-এর মতো প্রবন্ধ; তাই রবীন্দ্রনাথের হয়ে বক্তব্য প্রকাশ-করাটা যেন একরকম অনিবার্যই ছিল ক্ষিতিমোহন সেনের জন্য, তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ আশি বছর পূর্ণ করে তাঁর কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা যে বললেন, তারও একটা অন্য অর্থ ও ব্যঞ্জনা আছে। কিন্তু কথা হলো, আমরা এখনো তা গ্রহণে সক্ষম কি না।
২
এই অভিজ্ঞতা যে তিক্ত, তা তো বোঝা গেল পরে, শেষ বয়সের লেখা পড়ে; তাঁর আগে কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের?
আমরা জেনেছি, একসময় ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ইংরেজি সাহিত্যকে জানা, শেকসপিয়রের নাটক, বায়রনের কবিতা, বার্কের বাগ্মিতা আর মেকলের ‘ভাষাপ্রবাহের তরঙ্গভঙ্গ’ নিয়ে নিয়ত আলোচনা-পর্যালোচনাকে মার্জিতমনা বৈদগ্ধ্যের পরিচায়ক বলে ধরে নেওয়া হতো। এ-প্রবণতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের যে আপত্তি ছিল তা নয়, বরং তখন স্বরাজ ও স্বাধীনতা নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়ে গেলেও অন্তরে ছিল ইংরেজদের ঔদার্যের প্রতি বিশ্বাস। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন:
একসময় আমাদের সাধকেরা স্থির করেছিলেন যে, এই বিজিত জাতির স্বাধীনতার পথ বিজয়ী জাতির দাক্ষিণ্যের দ্বারাই প্রশস্ত হবে। কেননা, একসময় অত্যাচার-প্রপীড়িত জাতির আশ্রয়স্থল ছিল ইংল্যান্ড। যারা স্বজাতির সম্মান রক্ষার জন্য প্রাণপণ করছিল তাদের অকুণ্ঠিত আসন ছিল ইংল্যান্ডে। মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয় দেখেছি ইংরেজ-চরিত্রে। তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়েই ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলাম। তখনো সাম্রাজ্যমদমত্ততায় তাদের স্বভাবের দাক্ষিণ্য কলুষিত হয়নি।১
ইংরেজদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এমন বিশ্বাস তৈরি হওয়ার পেছনে কিছুটা ছিল পারিবারিক প্রভাব, বাকিটা নিজের জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা। তিনি অল্পবয়সে যখন ইংল্যান্ডে যান তখন সেখানে ব্রাইটের কণ্ঠে চিরকালের ইংরেজের বাণী শুনেছিলেন যা জাতিগত সীমা অতিক্রম করে তাঁর মনে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এ-অভিজ্ঞতা থেকেই রবীন্দ্রনাথ সবসময় এই ধারণা মনে লালন করেছেন যে, মানব-মনের শ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তিগুলো কখনো জাতিগত সীমায় আবদ্ধ থাকতে পারে না, ইংরেজি সাহিত্য পড়ে—তাঁর মতে—তিনি যে-‘পুষ্টিলাভ’ করেছেন তার ‘বিজয়শঙ্খ’ সবসময় তাঁর মনে ‘মন্দ্রিত’ হয়েছে। মেকলের ‘এডুকেশন মিনিট’-কে আমরা যেভাবেই মূল্যায়ন করি না কেন এবং তার ফল যেভাবেই ভোগ করি না কেন, খোদ মেকলে এর মাধ্যমে তো তা-ই চাইছিলেন। সে-সময় কিছু ইংরেজ অবশ্য আশঙ্কা করেছিলেন যে, আধুনিক শিক্ষার বিস্তার ঘটলে ভারতীয়রা আত্মসচেতন হয়ে উঠবে এবং তারা সুযোগ বুঝে স্ব-শাসনও চাইবে—তখন এ-কথা শুনে জাতিগর্বী মেকলে বলেছিলেন: ‘whenever it comes, it will be the proudest day in the English History।’২ কার্যত তা-ই হয়েছিল।
এমন মনোভাব যে রবীন্দ্রনাথ বা কিছু মানুষের ছিল তা নয়, আরও অনেকের ছিল—বিষয়টি চোখে পড়েছিল রবীন্দ্র-অনুরাগী ও জীবদ্দশায় ভারতের এই সকল তৎপরতার নিবিড় পর্যবেক্ষক কাজী আবদুল ওদুদের। তিনি লিখেছিলেন, সেদিন ইংরেজদের প্রতি শিক্ষিত বাঙালিদের যে-অকপট শ্রদ্ধা ছিল তা মূলত তাদের ‘সুন্দর ও মহৎ রূপ’-এর প্রতি শ্রদ্ধা, কিন্তু তাদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে এরা ঠিকই দাঁড়িয়েছিল। ওদুদের এই মন্তব্য অবশ্য ইংরেজদের বিষয়ে ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের মনোভাবের বিষয়টি মাথায় রেখে করা, কিন্তু ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে রানির প্রতি ভারতবাসীর শিথিল মনোভাব এবং দাবি আদায়ের ভাষাকে তো পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছিল। বরং এর চেয়ে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের বণিক বৃত্তি, ব্রিটিশদের সমকক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা এবং তাঁদের ব্যবসায়িক নীতিভঙ্গের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদের ভাষা ছিল আরো তীব্র ও ব্যক্তিত্বময়।
রবীন্দ্রনাথের চিন্তায় পারিবারিক প্রভাবের কথা যেটুকু বলা হয়েছে তা পাল্টাতে শুরু করে ১৮৯০ সালের শেষের দিকে জমিদারির কাজে পূর্ববঙ্গে চলে আসার পর। এর আগের সময় তো ছিল নির্জন নিঃসঙ্গ ভেলায়-ভাসা জীবন। ‘My banished soul sitting in the civilized isolation of the town-life cried within me for the enlargement of the horizon of its comprehension. I was like the town-away line of a verse, always in a state of suspense, while the other line, with which it rhymed and which could give it fullness, was smudged by the mist away in some undecipherable distance.’৩ এর বাইরে গিয়ে তিনি গ্রামসমাজের যে-অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন তা ছিল ভয়াবহ। সেখানে খাদ্য ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা নেই, মৃত্যু হাজির হলে যেখানে মাথা পেতে নিতে হয় এবং অবিচার হলে মনে করা হয় তা ছিল নির্ধারিত; দেখলেন, যে-শিকড় রস গ্রহণ করবে তাতে পোকায় ধরেছে, যে-মাটি থেকে খাদ্য আসবে তা পাথর হয়ে গেছে; ‘যে গ্রামসমাজ জাতির জন্মভূমি ও আশ্রয়স্থল’ তা বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিন্নমূল গাছের মতো নবীন সময়ের নির্দয় বেনোজলে ভেসে যাচ্ছে।৪ এই দুরবস্থার জন্য তিনি পরোক্ষে ও প্রকারান্তরে স্ব-শ্রেণি ও শাসকদেরকেই দায়ী করেছেন, কিন্তু তা ততটা জোরের সঙ্গে নয়। তবে এ-ক্ষেত্রে, হতভাগ্যদের পরের হাত ও নিজের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত রূপে সুস্থ ও শিক্ষিত করার দিকে জোর দিয়েছিলেন, চেয়েছিলেন আত্মশক্তি ও আত্মনির্ভরতার জাগরণ। তিনি তাঁর বহু লেখায় যে বলেছেন ভারত সবসময় ছিল সমাজনির্ভর, তাই সমাজ-মানুষ তার নিজের শক্তির জোরে তার সমাধান করতে হবে, এর জন্য রাষ্ট্রের সহায়তার দরকার নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত মাথায় রেখে করা রবীন্দ্রনাথের এই সকল মন্তব্যে দ্বন্দ্বের পরিচয় খুঁজে পাওয়া যাবে। আমাদের মনে পড়ে যেতে পারে ‘নৈবেদ্য’ কাব্যের সেই পঙ্ক্তিগুলোর কথা:
কোরো না কোরো না লজ্জা হে ভারতবাসী,
শক্তিমদমত্ত ওই বণিকবিলাসী
ধনদৃপ্ত কটাক্ষ সম্মুখে
সরল জীবনখানি করিতে বহন।৫
রবীন্দ্র-চিন্তায় এই দুই মনোভাবই সত্য, এতে কেউ দ্বন্দ্ব বা স্ববিরোধের পরিচয় পেলে তাকে ছিদ্রান্বেষী বলা যাবে না; তবে এ-কথা মনে রাখতে হবে যে, আশি বছর বয়সে পৌঁছবার বহু আগে থেকেই, বাইরে থেকে কতটুকু গ্রহণ করবেন কি করবেন না সে-বিষয়ে সচেতন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। একসময়কার সমাজনির্ভর স্বয়ংসম্পূর্ণ ভারতেতিহাসের দিকে তাকিয়ে তাঁর এই ধারণা তৈরি হয়েছিল যে, ইংরেজ-শাসনের কারণে অন্ন-বস্ত্র, শিক্ষা ও আরোগ্যের যে-শোকাবহ অভাব তৈরি হয়েছে তা আমাদের নিজম্ব সমাজ-শক্তির জোরেই হয়ত পূরণ করা সম্ভব, সে-কারণে এই অভাবের চেয়েও আমাদের মধ্যকার ‘আত্মবিচ্ছেদ’-এর ঘটনাটিকে তাঁর কাছে মনে হয়েছে ‘অতি নৃশংস’। এই বিচ্ছেদ হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যকার বিচ্ছেদ, যা নৃশংস, যার নেপথ্যে রয়েছে ভারত-শাসনযন্ত্রের ঊর্ধ্বস্তরের কোনো গোপন কেন্দ্রের ভূমিকা।৬
হিন্দু-মুসলমান বিচ্ছেদ বিষয়ে শেষমেশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেও নানা সময়ে, নানা সংকটে বিষয়টি নিয়ে তিনি ভেবেছেন তারও বহু আগে থেকেই। হিন্দু-মুসলমান সমস্যার সমাধান কী, কালিদাস নাগের এমন একটি প্রশ্নের জবাবে ১৩২৯ বঙ্গাব্দে শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ইউরোপ যেভাবে সত্য সাধনা ও জ্ঞানের ব্যাপ্তির মাধ্যমে মধ্যযুগের ভিতর দিয়ে আধুনিক যুগে এসে পৌঁছেছে, আমাদের হিন্দু-মুসলমানকেও সেভাবে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। ধর্মকে কবর বানিয়ে সমগ্র জাতিকে সেই ‘ভূতকালের মধ্যে সর্বতোভাবে নিহিত করে রাখলে’ উন্নতি হবে না, মিলবারও উপায় থাকবে না।৭
তারপর ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে লিখিত তাঁর ‘হিন্দু মুসলমান’ প্রবন্ধে দুই ধর্মমত এবং সমাজরীতির প্রভেদ ও বিরুদ্ধতার কথা স্বীকার করেও বলেছিলেন, এই সব সত্ত্বেও আমাদেরকে মিলতে হবে; এবং রাষ্ট্রিক অধিকার আদায় বিষয়ে দর-কষাকষি করে দুই সম্প্রদায়ের মন-কষাকষি বাড়িয়ে শত্রুপক্ষের আনন্দবর্ধন করা ঠিক নয়। তবে একথাও বলেছেন যে, স্বার্থের জন্য শেষ পর্যন্ত পলিটিক্সের তালি-দেওয়া মিলনকে সমর্থন করেন না। এর কারণ, যেখানে গাছের গোড়ায় বিচ্ছেদের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জল ঢেলে গাছকে চিরদিন সজীব রাখা যায় না, তাই একদম গোড়ায় গিয়ে আমাদের মিলতে হবে। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব, এই বিষয়ে তখনো, ১৩৩৮ সালেও, সমস্ত হৃদয়-মন দিয়ে ভেবে দেখা হয়নি বলে স্বীকার করেছেন রবীন্দ্রনাথ। একসময় খেলাফতকে সমর্থন করে গান্ধি যে মিলনের সেতু তৈরি করবেন বলে ভেবেছিলেন, সেই উদ্যোগকেও তার কাছে ‘বাহ্য’-এর ব্যাপার বলে মনে হয়েছিল। এরপর কাজী আবদুল ওদুদের ‘চিত্তবৃত্তির ঔদার্য’কে হিন্দু-মুসলমানের ‘মিলনের একটি প্রশস্ত পথ রূপে’ বিবেচিত হওয়ায় তাঁকে ১৩৪২ বঙ্গাব্দে শান্তিনিকেতনে ‘হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ’ শিরোনামে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু লক্ষ করলে দেখব, রবীন্দ্রনাথ বা ওদুদ দুজনেই তখনো এই বিরোধের কারণ হিসেবে সরাসরি শাসকদেরকে দায়ী করেননি। এর কারণ হয়ত এই যে, এই দুজনেই মনে করতেন এ-বিরোধ ইংরেজদের আসার বহু আগে থেকেই চলে আসছে, আকবরও তা নিরসনের চেষ্টা করেছেন, আল-বিরুনিও তাঁর ভারত-বিবরণে এই বিরোধের উল্লেখ করেছেন, পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক জগদীশনারায়ণ সরকারও তা স্বীকার করেন।৮ এ-প্রসঙ্গে, এখানে, কালিদাস নাগকে লিখিত চিঠির শেষ অংশটির উল্লেখ করা যেতে পারে যেখানে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আমাদের মানসপ্রকৃতির অবরোধ ঘোচাতে না পারলে কোনোরকমের স্বাধীনতা পাব না:
হিন্দুমুসলমানের মিলন যুগপরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু একথা শুনে ভয় পাবার কারণ নেই—কারণ, অন্য দেশে মানুষ সাধনার দ্বারা যুগ পরিবর্তন ঘটিয়েছে, গুটির যুগ থেকে ডানা মেলার যুগে বেরিয়ে এসেছে। আমরাও মানুষের মানসিক অবরোধ কেটে বেরিয়ে আসব।৯
এই যুগ-পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব? রবীন্দ্রনাথ বলছেন, তার জন্য সাধনার দরকার; কিন্তু কী সেই সাধনা?
যেহেতু এই চিঠি ১৩২৯ বঙ্গাব্দে লিখিত, এর আগে পূর্ববঙ্গের জমিদারি কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে শান্তিনিকেতনের কর্মময় জগতেও ঢুকে পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ, এর সঙ্গে তাঁর কথিত কল্পনাজগতের ‘আসমানদারি’র অভিজ্ঞতা তো তার রয়েছেই, তাই বুঝতে বাকি থাকে না যে এই সাধনার ধরন কীরকম হতে পারে। তিনি সত্য ও জ্ঞানের ব্যাপ্তির কথা বলেন, ব্রহ্মচর্যের কথাও বলেন, ধারণা করা যায় এই সবকিছুর সঙ্গে তাঁর সকল প্রকার অভিজ্ঞতার বিকিরণও যুক্ত হবে। কিন্তু তা তো এমনি এমনি হয় না, তার জন্য কোনো-না-কোনো প্রেরণা বা অভিঘাতের প্রয়োজন। একদিন ইংরেজরা এখানে এসেছিল বলে সেই প্রেরণার সূত্রেই রবীন্দ্রনাথ বারবার ইউরোপের দিকে তাকিয়েছেন। তাঁর বহুলপঠিত প্রবন্ধ ‘কালান্তর’-এর কথা স্মরণ করতে পারি যেখানে তিনি লিখেছিলেন: একসময় আমাদের স্থাবর মনে ইউরোপীয় চিত্তের জঙ্গম শক্তি এমনভাবে আঘাত করেছিল, যেমন দূর আকাশ থেকে বৃষ্টিধারা পড়ে মাটির নিচে গিয়ে ‘নিশ্চেষ্ট অন্তরের মধ্যে প্রবেশ ক’রে প্রাণের চেষ্টা সঞ্চার করে দেয়, সেই চেষ্টা বিচিত্র রূপে অঙ্কুরিত বিকশিত হতে থাকে।’ রবীন্দ্রনাথ বলছেন, সেই যুগের চিত্তের জ্যোতি পশ্চিম দিগন্ত থেকে বের হয় হয়ে মানবেতিহাসের আকাশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।১০ বোঝাই যায় রবীন্দ্রনাথ তা গ্রহণ করবেন, কারণ সজীব মন গ্রহণ না-করে পারে না। এই রবীন্দ্রনাথই ‘সভ্যতার সংকট’-এ এসে বলছেন:
অন্ন বস্ত্র পানীয় শিক্ষা আরোগ্য প্রভৃতি মানুষের শরীরমনের পক্ষে যা কিছু অত্যাবশ্যক তার এমন নিরতিশয় অভাব বোধহয় পৃথিবীর আধুনিক শাসন-চালিত কোনো দেশেই ঘটেনি। অথচ এই দেশ ইংরেজকে দীর্ঘকাল ধরে তার ঐশ্বর্য জুগিয়ে এসেছে। যখন সভ্য জগতের মহিমাধ্যানে একান্তমনে নিবিষ্ট ছিলেম তখন কোনোদিন সভ্যনামধারী মানব-আদর্শের এতো বড়ো নিকৃষ্ঠ বিকৃত রূপ কল্পনাই করতে পারিনি; অবশেষে দেখছি, একদিন এই বিকারের ভিতর দিয়ে বহুকোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্যজাতির অপরিসীম ঔদাসীন্য।১১
এখানে একবার ‘ইংরেজ’ আর বাকি তিনবারই রয়েছে ‘সভ্য’ শব্দের উল্লেখ; বোঝা যাচ্ছে এখন আর এই সভ্য ইংরেজদের প্রতি তার আগের মোহ নেই, একান্ত মনে নিবিষ্ট হওয়ার আগ্রহও নেই। তাঁর বেশকিছু লেখায় খেয়াল করলে দেখব মানুষের দারিদ্র্য প্রসঙ্গে শাসকদের কর্তব্য বিষয়ে কথা বলার চেয়ে আত্মজাগরণ আর সমাজ-শক্তির বিকাশ বিষয়ে বেশি জোর দিয়েছেন, এখন দেখা যায়, দারিদ্র্য আর হিন্দু-মুসলমান বিচ্ছেদ এই সংকটের জন্য সরাসরি শাসকদেরকেই দায়ী করছেন রবীন্দ্রনাথ। এই মত পরিবর্তনের কারণ কি ‘সভ্যতার সংকট’ময় পরিস্থিতি, নাকি অন্য কিছু? তিনি ‘সাম্রাজ্যমদমত্ততা’র কথাও অবশ্য বলেছেন, কিন্তু ইংরেজরা তো অল্পদিন ধরে সাম্রাজ্যবাদী নয়। হতে পারে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ আর ‘সাম্রাজ্যমদমত্ততা’ এই দুই-এর উপরই সবিশেষ জোর দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলতে চাচ্ছেন, তারা সাম্রাজ্যবাদী হলেও সাম্রাজ্যমদমত্ত ছিল না, কিন্তু এখন হয়েছে এবং তাই তাদের স্বভাবের দাক্ষিণ্যও কলুষিত হয়ে গেছে।
এ-ছাড়া সভ্যতার সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্কের বিষয়টিকেও তো এখানে এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। উইল ডুরান্টের দি কেস ফর ইন্ডিয়া নামে যে-বইটি নিয়ে একসময় আলোচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ এখানে সে-বইয়ের মুখবন্ধ থেকে কিছু অংশ পড়ে দেখা যেতে পারে:
I am not fond of the British; the English are the best gentlemen on earth, British are the worst of all imperialists. The English gave the world liberty, and the British are destroying it. I confess that I am prejudiced in favor of liberty.১২
সভ্যতার ইতিহাস লিখবেন বলে ভারতে এসেছিলেন উইল ডুরান্ট, কিন্তু তিনি আমেরিকায় বসে যে-ভারতকে জেনেছিলেন, এখানে এসে অন্য এক ভারতকে দেখলেন, তাঁর দেখা ভারতের বিবরণই হলো দি কেস ফর ইন্ডিয়া। অন্য কোনো দেশে তিনি ব্রিটিশদের দেখেছিলেন কিনা জানি না, কিন্তু এখানে তিনি ভারতীয়দেরকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখেছেন। শাসকেরা যদিও বলেছিল কুসংস্কার আর জনসংখ্যার আধিক্যই এই মৃত্যুর কারণ, কিন্তু, তাঁর মতে, এর মূল কারণ ইতিহাসের নিষ্ঠুর জঘন্য শোষণ। উইল ডুরান্টের এই বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩০ সালে, নিউইয়র্ক থেকে; আর ১৯৩১ সালে দি মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ যে-আলোচনা লেখেন তা পড়লে বোঝা যায় তিনি তখন আর কোনোভাবে এদেশে ব্রিটিশ-শাসন চাচ্ছেন না; তাই বলছেন: ‘ব্রিটিশদের সঙ্গ ত্যাগ করে স্বাধীন হবে, ভারত এই স্বপ্ন দেখলেও বিরক্ত হন এমন কিছু মার্কিন আমি দেখেছি। একদিন মানুষের যে অধিকার অর্জন করতে তারা নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, আমরাও যে সেই লড়াইয়ের কথা ভাবছি এটা তাদের অসহ্য ঠেকে।’ ব্রিটিশদের সঙ্গ ত্যাগ করে স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টি নিয়ে তখনই চিন্তা করছিলেন রবীন্দ্রনাথ, এবং তার একদশক পরে ‘সভ্যতার সংকট’-এ দেশভাগ ও স্বাধীনতার পরিণামদর্শীর ভূমিকায় কথা বলছেন:
ভাগ্যচক্রের পরিবর্তনের দ্বারা একদিন না একদিন ইংরেজকে এ ভারতসাম্রাজ্য ত্যাগ করে যেতে হবে। কিন্তু কোন ভারতবর্ষকে সে পিছনে ত্যাগ করে যাবে? কী লক্ষ্মীছাড়া দীনতার আবর্জনাকে। একাধিক শতাব্দীর শাসনধারা যখন শুষ্ক হয়ে যাবে, তখন এ কী বিস্তীর্ণ পঙ্কশয্যা দুর্বিষহ নিষ্ফলতাকে বহন করতে থাকবে। জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম য়ুরোপের অন্তরের সম্পদ এই সভ্যতার দানকে। আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গল।১৩
ভাগ্যচক্রের কথা বলায় এখানে রবীন্দ্রনাথকে পরিণামদর্শী না বলে ভবিষ্যৎ-দর্শীও বলা যেতে পারে, কারণ কথায় ‘স্বাধীনতা’র উল্লেখ স্পষ্টভাবেই রয়েছে; তবে যেহেতু দ্বিজাতি তত্ত্বের ধুয়ো তখনো ওঠেনি বা প্রবল নয়, তাই ‘দেশভাগ’-এর উল্লেখটি কারও কারও কাছে দূর-আরোপন বলে মনে হতে পারে, কিন্তু তিনি তো নৃশংস বিচ্ছেদের কথা আগেই বলেছিলেন।
এই উক্তিতে স্পষ্টভাবেই রয়েছে ‘ভারতসাম্রাজ্য’-এর কথা যাকে তারা একদিন কেড়ে নিয়েছিল আর সে-অর্থে তো তারা তো পাক্কা সাম্রাজ্যবাদীও। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাছে ‘নেশন’-এর চেয়ে সমাজের গুরুত্ব বেশি বলে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে মহৎ কোনো কিছু গ্রহণে আপত্তি থাকবার কথা নয়। রবীন্দ্রনাথ দার্শনিক ও ঐতিহাসিক উইল ডুরান্টের লেখার নিবিড় পাঠক ছিলেন বলে এখানে আবার তাঁর ইন্ট্রোডাকশন টু স্টোরি অফ সিভিলাইজেশন: আওয়ার অরিয়েন্টাল হেরিটেজ বইয়ে উল্লিখিত সভ্যতার ৪টি উপাদানের কথা স্মরণ করতে পারি। উপাদানগুলো হলো: অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, রাজনৈতিক স্থিরতা, নীতিগত উন্নতি এবং জ্ঞান ও শিল্পচর্চা।১৪ এখন কথা হলো, কোনো দেশ বা অঞ্চল সাম্রাজ্যবাদীর কবলে পড়লে সভ্যতার এই সব উপকরণ সেখানে থাকবে কি না? কোনো জাতি যদি ইংরেজদের মতো উদারনীতিক আর বিচিত্রমুখী জ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হয় এবং তার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য-পরম্পরা থাকে, তাহলে সে যদি সাম্রাজ্যবাদীও হয় তবু ধারণা করি রবীন্দ্রনাথ তাদের সভ্য বলতে পারেন। এ-প্রসঙ্গে ১৩০৮ বঙ্গাব্দে লিখিত রবীন্দ্রনাথের ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা’ প্রবন্ধের উল্লেখ করা যেতে পারে যেখানে তিনি ফরাসি মনীষী গিজোর বইয়ের আলোকে লিখেছেন, এশিয়া, প্রাচীন গ্রিস ও রোম সকল সভ্যতায়ই রয়েছে একধরনের একমুখী ও স্থায়ী ভাব, কিন্তু ইউরোপীয় সভ্যতার প্রকৃতি বহুমুখী, বিচিত্র, জটিল ও বিক্ষুব্ধ। এর মধ্যে সমাজতন্ত্রের মূলতত্ত্ব, লৌকিক, আধ্যাত্মিক, রাজতন্ত্র, পুরোহিততন্ত্র প্রজাতন্ত্রসহ সমাজপদ্ধতির সকল পর্যায় বিজড়িত, এরা যেন পরস্পর লড়াই করছে—এই যে এত বৈচিত্র্য, তার মধ্যেও রয়েছে এমন এক পারিবারিক সাদৃশ্য, তাতে তাকে ইউরোপীয় বলে চেনা যায়।১৫ এই সভ্যতার প্রতিই আগ্রহী রবীন্দ্রনাথ। সংকীর্ণ ভূগোল-খণ্ড আর আচারের ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং মনু-প্রবর্তিত যে—‘সদাচার’—রবীন্দ্রনাথের মতে যাকে আমরা ‘সিভিলিজেশন’ বলি—তার শীলিত রূপের সঙ্গে অথবা তার জায়গায় ইউরোপীয় সভ্যতার আদর্শকে ন্যায়বুদ্ধির অনুশাসনে ইংরেজ জাতির চরিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, আর ঠিক এজন্যই তাঁকে কঠিন দুঃখ পেতে হয়েছে, বিচ্ছেদ সইতে হয়েছে এবং তাঁর বিশ্বাসও ভঙ্গ হয়েছে। তার কারণ রবীন্দ্রনাথের জাতির অন্তর্প্রকৃতি আর ওই জাতির সভ্যতার প্রকৃতির মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। মন্তব্যটি নিঃসন্দেহে ব্যাখ্যাযোগ্য এবং বিষয়টিও আরও একটি রচনার দাবিদার, তবু এখানে রবীন্দ্র-চিন্তার আলোকে শুধু এটুকুই বলা যায় যে, ইউরোপীয় সভ্যতার একটি প্রধান সমস্যা বা সংকটের দিক হলো তার রাষ্ট্রনির্ভরতা, আর ভারতীয় সভ্যতা হলো সমাজনির্ভর; সংকট এখানেই যে, রাষ্ট্রের স্বার্থ যখন ‘অধিক স্ফীতি লাভ করে’ তখন বিনাশের ছিদ্র দেখা দেয় এবং সে-পথে শনি প্রবেশ করে। আমরা বলতে পারি এ-ই হলো সাম্রাজ্যবাদ, যার শেষ পরিণাম সাম্রাজ্যমদমত্ততা। আশা করি সকলেরই মনে পড়বে সভ্যতার সংকটের সেই অমোঘ ও ব্যথিত উক্তি: ‘ভারতবর্ষ ইংরেজের সভ্যশাসনের জগদ্দল পাথর বুকে নিয়ে তলিয়ে পড়ে রইল নিরুপায় নিশ্চলতার মধ্যে।’ শুরুতেই বলেছি এই প্রবন্ধটি একটি অনিশ্চিত আশাবাদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে, তিনি বলেছিলেন:
জীবনের প্রথম প্রারম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম য়ুরোপের অন্তরের সম্পদ এই সভ্যতার দানকে। আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল। আজ আশা করে আছি পরিত্রাণকর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্র্যলাঞ্ছিত কুটিরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, একদিন সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে ওই পূর্বদিগন্ত থেকেই।১৬
প্রবন্ধটি পড়বার পর উপসংহারে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের অশীতিবর্ষপূর্তি উৎসবে যে-গানটি গাওয়া হয় তাতে রয়েছে মর্ত্যধূলির ঘাসে ঘাসে এক মহামানবের আসার সংবাদ—অনিশ্চিত হলেও তা তো আশারই কথা; আর দিগ্দর্শী হিসেবে তিনি যা জানাচ্ছেন তার সঙ্গেও রয়েছে এর যোগ: ‘একথা আজ বলে যাব, প্রবল প্রতাপশালীরও ক্ষমতা মদমত্ততা আত্মম্ভরিতা যে নিরাপদ নয় তারই প্রমাণ হবার দিন আজ সম্মুখে উপস্থিত হয়েছে।’ যারা নিরাপদ নয় তাদের সম্পর্কে তো আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, বোঝাই যায়, এ ছিল স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়ার ইঙ্গিত।
তথ্যসূত্র
১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘সভ্যতার সংকট’, রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্রয়োদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬ পৃ. ৭৪১;
২. লর্ড মেকলে, নির্বাচিত রচনা, আরশাদ আজিজ অনূদিত (অনুবাদকের ভূমিকা), বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০০১, পৃ. ৯;
৩. Rabindranath Tagor, The Religion of Man,The Hibbert Lecture for 1930.
৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘সভাপতির অভিভাষণ’ [পাবনা প্রাদেশিক সম্মিলনী] সমূহ, রবীন্দ্র-রচনাবলী পঞ্চম খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ. ৭০৯;
৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নৈবেদ্য, রবীন্দ্র-রচনাবলী চতুর্থ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ. ৩০৯;
৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘সভ্যতার সংকট’, রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্রয়োদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ. ৭৪৩;
৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘হিন্দুমুসলমান’, কালান্তর, রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ. ৬২০;
৮. জগদীশনারায়ণ সরকার, ‘ভূমিকা’, বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক [মধ্যযুগ], বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা, ১৩৮৮, পৃ. ১৭;
৯. পূর্বোক্ত রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ড, ৬২০-৬২১;
১০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘কালান্তর’, কালান্তর, রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বাদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ. ৫৩৮;
১১. পূর্বোক্ত রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্রয়োদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬ পৃ. ৭৪২;
১২. Will Durant, The Case for India, Simon and chuster, New York, 1930, P 3.
১৩. পূর্বোক্ত রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্রয়োদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ.৭৪৪;
১৪. উইল ডুরান্ট সভ্যতার জন্ম: সভ্যতার স্বভাব ও ভিত্তি প্রসঙ্গে ভূমিকা, জাভেদ হুসেন অনূদিত, বাঙলায়ন, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ৯;
১৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা’, রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ. ৭২৭-৭২৮;
১৬. পূর্বোক্ত রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্রয়োদশ খণ্ড, বিশ্বভারতী, কলকাতা ১৩৯৬, পৃ. ৭৪৪।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন