চর্ব্য চোষ্য [ত্রয়োবিংশ পর্ব]
পড়ুন ► চর্ব্য চোষ্য [দ্বাবিংশ পর্ব]
চর্ব্য চোষ্য [ত্রয়োবিংশ পর্ব]
ফিঙ্গেবাড়ি দপ্তরে শিল্পাঞ্চল পুলিশের মিটিং চলছে।
পুলিশ সুপার হাসান-উদ-দৌলা কান থেকে সেলফোন নামিয়ে টেবিলে রাখলেন। বাঁহাতের বুড়ো আঙ্গুল আর মধ্যমা দিয়ে দুই চোখ চেপে ধরে রাখলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, ‘আমাদের আরো কিছু ইঁদুর ধরতে হবে। ইঁদুরগুলোও বিড়ালের চাইতে কম যায় না তা ত জানেন।’
‘ধাড়ি ইঁদুরগুলো ত সব ধরেছি, স্যার!’
‘আরো ধরতে হবে। পাতিগুলো ধরতে হবে। ছুঁচোগুলো ধরতে হবে। রিস্ক নেওয়া যাবে না। আমাদের সফল হতে হবে।’
অধস্তন অফিসারদের মুখ ভার হয়ে গেল। শনিবার মালিকরা কারখানা বন্ধ ঘোষণা করলে সেই রাত থেকে ধরাধরি চলছে। আর আজ হল বুধবার। দৈনিক পনের-ষোল ঘণ্টা ইঁদুরের পাছে দৌড়ানো কি চাট্টিখানি কথা নাকি।
পরিদর্শক শাহিনুর বললেন, ‘এবার একটু বেশি করে প্যাঁচ দিতে হবে। না হলে কয়দিন পরে ছাড়া পেয়ে আবার ঝামেলা পাকায়।’
‘ঠিক বলেছেন। সবকিছু দীর্ঘমেয়াদি হওয়া উচিত। টেকসই মানেই দীর্ঘমেয়াদি। আজ রাতে আমিও থাকব আপনাদের সাথে।’
পুলিশ সুপার উঠে পড়লেন। জিনসের ভেতরে টি-শার্ট গুঁজে দেওয়া বলিষ্ঠ দেহ। মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। প্রতিজ্ঞায় অটল হবার সাধনা যেন। শিল্পাঞ্চল নিরাপদ করার প্রতিজ্ঞা রয়েছে তার।
আমির ফিঙ্গেবাড়ি গলির ভেতর চায়ের দোকানে বসে আছে। সঙ্গে একদল শ্রমিক আর কয়েকজন তার মত নেতা। সবার পাছার নিচে রঙচটা ইস্পাতের বেঞ্চ। পায়ের নিচে স্যাঁতসেঁতে মাটিমাখা ইট বিছানো। দোকানের কোণে টিমটিম করে জ্বলছে ছোট একটা বিদ্যুৎ-বাতি।
মাহের এসে বলল, ‘কী খবর, ঝোড়ো নেতা? সত্যি সত্যি ঝড় বইয়ে দিলে ত!’
এক কথা চার দিন ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলছে মাহের। বড় আন্দোলন হওয়ায় সে খুব খুশি। আমির খুশি হলে সেও খুশি হয়।
আমির বলল, ‘ধরপাকড় বাড়ছে ত বাড়ছেই।’
‘কিন্তু তোরে ত ধরে না! শ্বশুরবাড়ি না গেলে বড় নেতা হবি কিভাবে?’
কারাগার মানে শ্বশুরবাড়ি। মাঝে মাঝেই এ নিয়ে মজা করে তারা।
একজন বলল, ‘শুধু ধরে নিয়ে গেলে ত সমস্যা ছিল না। ভেঙেচুরে দিচ্ছে যে—! হাত-পা ভেঙ্গে দিচ্ছে। চোখ-কান ফাটিয়ে দিচ্ছে।’
‘থাম। থাম। ভয় ধরিয়ে দিস না।’
আমিরের গলা কেঁপে উঠল। মাঝে মাঝেই তার এমন হচ্ছে। সোমবার বিকালে রাজ্জাককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে। গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে রাজ্জাককে ধরে নিয়ে গেল ফিঙ্গেবাড়ি মোড় থেকে। সেই থেকে আমির আর মোড়ে যায় না। ঘরে বসে কাগজের প্যাকেট বানায় আর গলির মধ্যে খানিকটা ভেতরে গিয়ে চা খায়। মোবাইল বন্ধ করে রাখে। মাঝে মাঝে চালু করে অন্য নেতাদের খোঁজ নেয়। বেশির ভাগই ধরা পড়েছে বলে খবর আসছে। রাজ্জাকের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও জানতে পারেনি আমির। দুই বছর ধরে যেভাবে গুম হবার আতঙ্ক বেড়েছে দেশে!
মাহের বলল, ‘আর একটা বিষয় বুঝলাম না। দশ দিন ধরে এত কিছু হল। কেউ বেতন বাড়ানোর নাম নিল না। সবাই শুধু আশ্বাস দিল। ঢাকার বড় মন্ত্রী আশ্বাস দিল। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বাড়ির পর এসে আশ্বাস দিয়ে গেল। মালিকরা কিছু বলল না।’
‘মালিকরা বড় বড় মন্ত্রীর সাথে মিটিং করল।’
‘মিটিংয়ে কী হল?’
‘মালিকরা নিরাপত্তা চাইল। মন্ত্রীও দিল আর মালিকরাও কারখানা খুলতে রাজি হয়ে গেল।’
‘তারা ত খোলার জন্য খাড়া করেই রেখেছে।’
‘খুলতে খুব মজা লাগে, তাই না?’
আমির মজা করছিল। শ্রমিকদের মন খারাপ হয়ে যায়। চায়ে আর ভক্তি আসে না। কয়েকজনের তামাকের অভ্যাস আছে। তাদের ফুসফুস ব্যাকুল হয়।
আমির বলল, ‘আরো বহুত দূর যেতে হবে। চোদন আছে আব্বা। ক্লাস টুর বই।’
‘টুর পর থ্রি, ফোর, ফাইভ…,’ মাহের তাল দিচ্ছিল।
আমির অস্বস্তিতে পড়ল একদল লোক আসতে দেখে। গ্রামের সাবেক মোড়লের ছেলে জাফর দফাদার রয়েছে এই দলে। তার দুইটা ট্রলার আছে। হরতালে কাজ থাকে না। কয়েক দিন আগে সে দলবল নিয়ে আমিরের সামনে দাঁড়াল। তাদের দুইজনের হাতে লাঠি ছিল। লাঠি দুইটা তারা হাতের মধ্যে মোচড়াচ্ছিল। জাফর বলছিল, ‘সারা জীবন কি খালি হাঙ্গামাই করে যাবা নাকি মিয়া? অনেক ত করেছ। এবার একটু ক্ষান্ত দাও। এখন কিন্তু মানুষ আর তোমার ধর্মঘট-টর্মঘট পছন্দ করে না।’
রাগের চোটে আমিরের হাত-পা কাঁপতে লাগল। চোখ লাল হয়ে উঠল। তবে সে দমে যায়। জাফর একটা ফ্যাসাদ বাধাতে চায় তা বোঝা যাচ্ছে।
এখন জাফর যেন ফুরফুর করছে, ‘কী খবর নেতাজি! একটু করে-ধরে খাচ্ছিলাম। তা ত বন্ধ করে দিলে।’
আমির হাত মুঠ পাকিয়ে মাটির দিকে তাকাল। তারপর চায়ের কাপ রেখে আগে একটা সিগারেট। রাগ দমিয়ে রাখার চেষ্টা। জাফরের মতলব বোঝার চেষ্টাও বটে। এই রাতে তারা গলির ভেতরে কেন এসেছে। তারা ত ফিঙ্গেবাড়ির মোড়ে আড্ডা দেয়। জাফর কি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে এসেছে এখানে। সে কি আমিরকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমির মোবাইলে সময় দেখল। রাত সোয়া বারটা। গলিতে দুএকটা লোক চলাচল করছে।
জাফর মোবাইল টেপাটিপি করে কানে চেপে ধরল। তারপর বলল, ‘ফিঙ্গেবাড়ি উত্তরপাড়ায় আসলাম একটু। খিরু ভাইর চা খেতে আসলাম।’
আমির উঠে পড়ল। ‘চল যাই।’
‘চল যাই।’ মাহেরও উঠল। তাদের দলের সবাই উঠল।
‘জাফর কি পুলিশের সোর্স নাকি?’
‘হতে পারে।’
বাড়ির কাছে গিয়ে মাহের আমিরকে সাবধানে থাকতে বলল, ‘আজ রাতে আর কোথাও বের হস না।’
‘আজ রাতে বাইরে থাকব ভাবছি।’
‘বাইরে কোথায়?’
‘কোনো মেসে থাকা যায়।’
‘তা মন্দ হয় না। আমার কাছে থাকবি নাকি?’
‘বাড়ি থাকা আর তোর কাছে থাকা এক কথা।’
মাহের চলে গেলে আমির তাদের ঘরের পাশে দোকানের সামনে দাঁড়াল। দোকানটা তখন বন্ধ হচ্ছিল। আমির দশ টাকা দিয়ে দুইটা রঙিন ললিপপ কিনল ভাগনেদের জন্য। তাদের বয়স চার-ছয়। ললিপপ দেখলে আনন্দে আত্মহারা হয় ভাগনেরা। গুলিস্তানে কাপড়ের রঙ দিয়ে তৈরি হয় এসব মাল—আমিরের মনের ওপর দিয়ে গড়িয়ে গেল টিভির খবর। প্রায়ই এসব খবর আসে গণমাধ্যমে। পুলিশ নাকি তাদের খুঁজে পায় না।
গলির সাথেই আমিরের ঘরের দরজা। প্রাচির নেই। আমির দরজায় টোকা দিতে গিয়েও দিল না। ফিরে গেল দোকানে। ললিপপ বদলে নিল এক প্যাকেট চিপস। কিন্তু তার মন খারাপ হয়। ভাগনেরা ললিপপ বেশি পছন্দ করে। কিছুক্ষণ দ্বিধায় ভোগার পর আমির চিপসের সাথে দুইটা লজেন্স নিল। ভাগনেরা লজেন্সও পছন্দ করে। আমির প্রতিবার বাড়ি ফিরলে তারা তাকে হৈচৈ করে জড়িয়ে ধরে।
ভাগনেরা ঘুমিয়ে পড়েছে।
দরজায় টোকা দিতেই আমিরের বোন দৌড়ে আসল। তার চোখেমুখে আতঙ্ক। ঢোক গিলে বলল, ‘পুলিশ এসেছিল।’
‘কখন?’
‘মিনিট পাঁচেক আগে। আমি তোমাকে ফোন করলাম।’
‘আমার ফোন ত বন্ধ। তোকে বললাম না?’
আমিরের দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। বাড়িতে পুলিশ আসতে পারে তা সে কল্পনাও করেনি। সে জানে পুলিশ রাস্তা থেকেই ধরে যাকে ধরার। মিছিলে ধাওয়া দিয়েও ধরে। কিন্তু সময় দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
‘মা কই?’
‘ঘুমাল। মার শরীর খারাপ।’
মা প্রায় সারা বছর অসুস্থ থাকে।
আমির দ্রুত ভাত খেয়ে বের হয়ে যাবে ভাবল। খেতে বসার আগে মেলামাইন গ্লাসে পানি ঢালল প্লাস্টিকের জগ থেকে। সাদা জগটা হলুদ হয়ে উঠেছে।
ভাত বাড়া আছে। আমির থালায় হাত দিতেই দরজায় কড়া নড়ল।
বোনের চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। দুই হাঁটু বাড়ি খেতে শুরু করে। আমিরও কেঁপে ওঠে। পুলিশ ত শুধু গ্রেপ্তার করে না। কারা আমিনুল ইসলামকে পিটিয়ে মারল? যে-ই হোক, তার কোনো ব্যক্তিগত শত্রু ছিল না। ব্যক্তিগত কোনো ঝামেলাও ছিল না কারুর সাথে। আমির বোনকে শিখিয়ে দিল কী বলতে হবে।
বোন দরজায় গিয়ে বলল, ‘কে?’
‘দরজা খোলেন!’
‘কে আপনি?’
আর কোনো শব্দ নেই। মোটেই দেরি না করে বাইরে থেকে দরজার দুই পাল্লার মাঝখানে ইস্পাতের পাত ঢুকিয়ে দিল। হালকা চাড় দিতেই ভেঙে যায় কাঠের খিল। বোন কোনো কথা বলতে পারছে না।
আমির ইতিমধ্যেই বারান্দায় লোহার বেড়ার তালা খুলে ফেলেছে। তিন ফুট সামনে চাচাত ভাইয়ের ঘরের পেছন দেয়াল। দুই ঘরের দুই কোণ যুক্ত করেছে একটা টিনের গেট। বুক সমান। সামনে নর্দমার ওপর দিয়ে সরু গলি। নর্দমার ঢাকনা ভেঙে গেছে বলে গেটটা তারা ব্যবহার করে না।
গেট খোলার সময় নেই। আমির সাবধানে বেয়ে উঠল। তবু খড়াং। টিনে ছোঁয়া লাগলেই খড়াং করে। শব্দ শুনে এসআই দানিউল দৌড়ে আসল। তার পাছে আরো চার পুলিশ। এসআই উঁকি দিয়েই পিছিয়ে যায়। দৌড়ে পেছন দিয়ে ঘুরে দুই পাশ দিয়ে ভাগ হয়ে ধাওয়া করে। আমির অন্য একটা গলিতে মোড় নিল। সামনে একটা লোক দেখা যাচ্ছে। জাফরের লোক কিনা কে জানে। আমির সাবধান থাকল। এমন দুএকটা লোক তার কিছু করতে পারবে না। কিন্তু আমির ভেবে পাচ্ছে না সেদিন যখন পুলিশ রাজ্জাককে ধরল তখন ত সেও সেখানে ছিল। তখন কেন তাকে ধরল না। তাহলে এখন কেন। তখন সেখানে স্থানীয় লোকজন ছিল। পুলিশ কি আমিরকে গোপনে ধরতে চায়।
আমির জোরে দৌড় দিল। গলির মাথায় যেতেই অন্যদিক থেকে চার-পাঁচজনের একটা দল ধাওয়া করল। দুই সারি টিনশেডের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে গেলে একটা চৌরাস্তা। একে অবশ্য চৌ-গলি বলাই ভাল। আমির দৌড়াতে দৌড়াতে কাদের নিটওয়্যারের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেল। সেখানে পথ ভুলে সে একটা প্রধান সড়কের কাছে চলে যায়। আমনি বুকের ভেতর ধড়াশ। এখানে র্যাব-পুলিশ টহল দেয়। রাতে তাদের সংখ্যা কম বটে। হঠাৎ এসে পড়লে পলানোর সুযোগ হবে না।
আবার ভেতরে ঢুকল আমির। সাথে সাথে দৌড়ে আসল সেই দলটা। আমির আরেকটা গলি দিয়ে গেল। সামনেই আশুলিয়া সীমান্ত। টঙ্গী-আশু মহাসড়ক। একপাশে ‘ছুটির দিনে রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টার’ যেখানে দেশি-বিদেশি অনেক রকম খাবার মেলে। পোশাক কারখানাকে কেন্দ্র করে এলাকার অর্থনীতি সব সময় চাঙ্গা থাকে। আমির এর পেছনে বসল একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু এদিকে কেউ এসে পড়লে সহজেই চোখে পড়বে। তারচেয়ে বরং রাস্তা পার হয়ে কনটেইনার ডিপোয় ঢুকে পড়া ভাল।
ডিপোয় ঢুকে আমির আরো বিপাকে পড়ল। দুই সারি কনটেইনারের পর ওপাশে ফাঁকা। ডিপোটা হঠাৎ হঠাৎ ভরে যায়। হঠাৎ হঠাৎ খালি হয়। এসব কনটেইনারে ভরেই তৈরি পোশাক বিদেশে পাঠায়।
ডিপোর সামনেই তুরাগের বালুচর। কালো। বৃষ্টির সময় ময়লা পানি এসে এসে আসল রঙ বদলে দিয়েছে। এলাকাটা বেশ ফাঁকা। লুকানো যাবে না। আমির কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে রাস্তা বরাবর উত্তর-পশ্চিম দিকে দৌড় দিল। পাশেই ভূমি-উন্নয়ন যন্তরপাতির ডিপো। এগুলো দিয়ে মাটি-বৃক্ষসহ পুরনো স্থাপনা ভেঙেচুরে জমি প্রস্তুত করে নতুন কারখানার জন্য। এগুলোর ভেতর দিয়ে চলে গেলে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।
খানিকটা যাওয়ার পর আমির আর কোনো পথ দেখতে পায় না। যন্ত্রপাতিগুলোর পেছনে বড় একটা কারখানা। তার পাশে টিনশেড মেস। তারপর সেই প্রধান সড়ক। আমির উল্টো দিকে দৌড় দিল। অমনি তিন লোকের মুখোমুখি। সে আবার প্রধান সড়কের দিকে দৌড় দিল। এখানেও তিন লোক। একজন পিস্তল তাক করল। অন্য তিনজনও দৌড়ে আসল।
সবাই নিঃশব্দে বিজয়ের হাসি হাসছে। তাদের মাথায় ছোট করে ছাঁটা চুল। জিনস, টি-শার্ট, কেডস পরা কয়েকজন। একজন সাদাটে সবুজ চেক জামা মাঞ্জা মারা। কালো প্যান্টের সাথে মিলিয়ে জুতো। আমির চকিতে চোখ বুলিয়ে নিল। তাদের ভঙ্গি দেখলেই বোঝা যায় সুপ্রশিক্ষিত। আমির আশপাশে তাকাল। বেশ দূরে একটা রিসোর্ট আছে। তার পাশে কয়েকটা গাছও আছে। পিস্তল ধরা লোকটাকে ল্যাং মেরে দৌড় দিলে—!
আমির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই টি-শার্ট মাঞ্জা মারা লোকটা পিস্তল বুকে ঠেকিয়ে ফেলল। বলিষ্ঠ দেহ তার। ভোঁতা নাক। পাতলা ঠোঁট। বাঁহাতে আমিরের পোলো শার্টের কলার ধরে এমন করে ঝাঁকি দিল যেন ইঁদুরের কান ধরে উঁচু করে ফেলল। মুহূর্ত মাত্র সময় না দিয়ে পেটে একটা ঘুসি। আমির কঁক করে ওঠে। অপুষ্টিতে ভোগা দেহটা ছিটকে পড়ল মাটিকাটা গাড়ির চেইনের ওপর। ধারালো চেইনের কোনায় গুঁতো খেয়ে পোলো শার্ট ছিঁড়ে যায়। পেটের চামড়া কাটা পড়ে।
মাথা ঝিম ধরে থাকলেও আমির জ্ঞান হারায়নি। পেশি শক্ত করে সোজা হয়ে ঘুরে বসল। চিৎকার দিতে গিয়েও দিল না। সে বরং একজনের গলা চেপে ধরতে চায়। মরে গেলেও সেই হাত কেউ ছুটাতে পারবে না। কিন্তু সেই সুযোগ তার হল না। মুহূর্তের মধ্যে গড়িয়ে পড়ল। আর দুই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা হয়ে গেল। মুখ বাঁধা হয়ে গেল। তারপর লোকগুলো নিরাপদ মনে করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আমির উঠে বসে চেইনে পিঠ ঠেকাল। জোরে নিশ্বাস নিল। চোখ বড় করে তাকাল লোকগুলোর দিকে। এই চোখ দুর্বল শত্রুর মনে ভয় ধরায়। হিংস্র শত্রুর মনে ক্রোধ জাগায়।
লোকগুলো গেঞ্জির নিচে পিঠে গুঁজে রাখা রড বের করতে গিয়ে থামল। হাতের কাছেই চেরাইকাঠের স্তূপ চোখে পড়লে। তিনজন তিন টুকরো কাঠ ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় নামে। আমির শক্ত হয়ে বসে থাকল। সেভাবেই তাকিয়ে থাকল। তার নাক থেঁতলে যায়। চোখের নিচে হাড় বেরিয়ে যায়। ভুরুসহ এক ফালি চামড়া ঝুলে পড়ল চোখের ওপর। কপাল ঘেমে গড়িয়ে গেল গরম ধারা। খেজুর গাছের কপাল থেকে রস চোয়ায় যেভাবে। দুইটার মধ্যে দৃশ্যমান পার্থক্য অনেক। একটা লাল আর একটা স্বচ্ছ। সম্পর্কও অনেক। দুইটারই প্রধান উপাদান পানি আর চিনি।
আসছে ► শেষ পর্ব
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন