জাহিদুল হকের মর্মভেদী পাথর চোখ এবং…

অ+ অ-

 

অঝোর বৃষ্টির মতো অনেক কান্না জেগে উঠেছে চারপাশে। শাঁই শাঁই শব্দে তীব্র বেগে ছুটে চলা রাত্রির একটানা এক্সপ্রেস ট্রেন। ভয়াল ভূকম্পনের শব্দে কেঁপে ওঠা এক অসহায় জনপদের দুর্বিষহ দৃশ্যাবলি চলচ্চিত্রের মতো সরে সরে পুনরাবৃত্তি চলছে। সে ছবি ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পৃথিবীতে। এ দৃশ্য দেখছে এক জোড়া কালো চোখ। কখনোবা দেশান্তরি এই একজোড়া পা পৃথিবীর বিচিত্র ভূমির স্নেহছায়ায় নিজেকে সতেজ করছে। অথচ নিরুদ্দিষ্ট এ-পা ঠিকই খুঁজে নেয় চির বাংলার প্রিয় আঁচল। এমনসব দৃশ্যাবলির মর্মে নিজেকে বিসর্জিত করে অনন্য হয়ে ওঠা, নিজের সময়ের অপরাপর ছায়া থেকে নিজেকে স্বতন্ত্র ঐশ্বর্যে অভিষিক্ত করার গৌরবে যিনি মহীয়ান, এই তো জাহিদুল হকএই তো জাহিদুল হকের শিল্পযাত্রা। এক নির্জন সন্তের জীবন যাপন করে গেছেন তিনি এই পৃথিবীতে।

বেদনাপুত্র খ্যাত শান্ত-নম্র-অতার্কিক এই মৌন ঋষি ভেতরে ভেতরে ভয়ংকর বিদ্রোহী। ব্যক্তিজীবনের এ স্নিগ্ধ অলৌকিক ছায়া তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে শিল্পজীবনেও। জাহিদুল হক [১১ আগস্ট ১৯৪৯-১৫ জানুয়ারি ২০২৪] পরিমিত শব্দের কবি। জাহিদুল হক ছন্দোগ্রাহ্য কবি। জাহিদুল হক আপাত প্রচল পথে থেকেও প্রচলবিরোধী এক কবি। কবিতায় নিম্নকণ্ঠী এ কবির উচ্চারণ আত্মা থেকে উৎসারিত। ফলে সহজেই অপর আত্মাকে তা স্পর্শ করে। বর্তমান রচনা কবির ওপর কোনও সামগ্রিক দৃষ্টিপাত না হলেও এতে সন্নিবেশিত হয়েছে সেই ব্যক্তিগত শোক ও দায়বোধের গল্প, যা কবির শেষজীবনের মহার্ঘ স্মৃতিলগ্ন। উচ্চারিত হয়েছে কবির কাব্যভুবনের প্রধান বৈশিষ্ট্যের কিঞ্চিৎ বিবৃতি, যেখানে তিনি এক সার্বভৌম ভূমি অধিকার করে আছেন। পাশাপাশি শিল্প, সমাজ ও সময় নিয়ে কবির একান্ত দৃষ্টিভঙ্গির দু-একটি আঁচড়।

ফেনী সাহিত্য সভা কর্তৃক প্রদত্ত সংবর্ধনায় বক্তব্য দিচ্ছেন কবি জাহিদুল হক

কৈশোরের কোন কুক্ষণে রেডিওতে শুনেছিলাম আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় গানটি; তা আজ আর মনে নেই! পরে মহানায়ক চলচ্চিত্রে সে গানের চিত্র-ধ্বনি মনে গভীর ক্ষতের মতো স্থায়ীভাবে অঙ্কিত হয়ে যায়। আরো পরে ২০০৬ সালে ময়মনসিংহের পাট চুকিয়ে ফেনীতে স্থিত হওয়ার বছরখানেক পর এ জেলার তৎকালীন প্রধান সাপ্তাহিক জহুর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কবিতা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। এটি আমার মধ্যে তুমুল প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এর একটি কারণ হতে পারে, আমিও আমার শৈশব-কৈশোর-যৌবনের শহর ছেড়ে এসেছি সদ্য, সে শহর কি আমাকে মনে রাখবে! কবি জাহিদুল হকের লেখা ফেনী কবিতার শুরুর পঙ্‌ক্তিগুলো ছিল এরকম

যখন ফেনী স্টেশনে এসে নামলাম, ভেবেছিলাম
অভ্যর্থনার বৃষ্টিপাতে
মুখরিত হবে ছোট্ট এ মফস্বল শহর;
    ভেবেছিলাম স্টেশনের ঘণ্টাধ্বনি গার্ডের হুইসিল
বাঁশির মতো বেজে উঠবে।
   ভেবেছিলাম মেঘগুলো তার আদর বুলিয়ে মুছে দেবে
বহুদিনকার অনাবৃষ্টি এবং খরা;
কিন্তু তার কিছুই হলো না, ফেনী তখন খুব উদাসীন।
ফেনী আমাকে চিনতে পারলো না।
নজরুল ইসলামকে যেমন করে চিনতে পেরেছিল,
শেখ মুজিবকে যেমন চিনতে পেরেছিল,
ফেনী আমাকে চিনতে পারলো না।
আমার আসার উপলক্ষে কলেজ রোডের ব্যাপ্টিস্ট মিশনে
        একবারও উচ্চারিত হলো না বাইবেল থেকে স্ত্রোত্রপাঠ
ট্রাংক রোডের বড় মসজিদ থেকে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে
একজন মানুষও এগিয়ে এসে আমার বুকে ফুঁ দিল না,
আমার সোনার বাংলা গাইতে গাইতে
      কাঁদতে কাঁদতে
একবারও তুই বলতে পারলি না,
‘হারামজাদা’ ছিলি কোথায়
এতটা দিন কোথায় ছিলি, কেমন ছিলি রে?
কিন্তু ফেনী তখন খুবই উদাসীন,
আমি শুধু দরোজা থেকে আরেক দরোজায়
কড়ার মতো বাজতে বাজতে খুবই ক্লান্ত... 

কবির কৈশোর ও প্রথম যৌবনের শহর ফেনী। এ শহরেই তিনি কবি হয়ে উঠেছেন। প্রগতিশীল রাজনীতির হাত ধরে এ শহরের পথঘাট উত্তাল করেছেন গণমানুষের অধিকার আদায়ের স্লোগানে। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রণী বেতার-যোদ্ধাদের একজন তিনি। এখানকার রাজাপুর স্কুল, ফেনী পাইলট হাই স্কুল ও ফেনী সরকারি কলেজ তার বেড়ে ওঠার স্বর্গভূমি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, জাহিদুল হকের পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গুণবতীর আকদিয়া গ্রাম। আর ফেনী তার মায়ের বাড়ি, এ ভূমিতেও রয়েছে তার সমান অধিকার, বান্ধবের অভিমান। আহা, এ শহর তাকে কতদিন কাছে ডাকেনি! ফলে এ শহর নিয়ে তার এ শোকবিহ্বল উচ্চারণ সহজেই আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। 

এ কবিতার জের ধরে গত পনেরো বছর ধরে শুধু ভেবেছি, ফেনী নিয়ে তার এ বেদনাকে লাঘব করা আমাদের দায়। তাকে একটি সংবর্ধনার মাধ্যমে সে দায় মোচন করতে হবে। কিন্তু বারবার থমকে গেছি, রক্তাক্ত হয়েছি বহু বৈরিতায়। এক পর্যায়ে নবগঠিত ফেনী সাহিত্য সভার উদ্যোগে গেল বছরের ৪ আগস্ট ২০২৩-এ কবিকে ফেনীতে আমন্ত্রণ জানাই। তিনি চলেও এসেছিলেন আগেপহেলা আগস্ট নিজের শহরটা ঘুরে ঘুরে দেখবেন বলে। সেসময় স্থানীয় রাজনীতি ঘেঁষা সাংস্কৃতিক এক বলয়ের অসংগত চাপে আমরা ৩ আগস্ট অনুষ্ঠানের পূর্বদিন আয়োজনটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিই। বেদনায় আমাদের কালো চোখ লাল হয়ে যায় এবং নীল। মো. আবদুল ওয়াদুদ, সৈকত রায়হান, সালেহা খানম, রাবেয়া সুলতানা, নুরুল আমিন হৃদয়, আর কে শামীম পাটোয়ারী, নাজিম উদ্দীন মাহমুদ ভূঞা, বকুল আকতার দরিয়াআমরা একজন অপরজনের দিকে তাকাতে পারছি না। কিন্তু মনে জেদ জেগেছিল ঠিকই।

অতিথিদের কাছ থেকে পোট্রেট উপহার নিচ্ছেন জাহিদুল হক 

পরের মাসে, ৯ সেপ্টেম্বর ফেনী সাহিত্য সভার অভিষেক ও কবি জাহিদুল হককে যথাযথ সংবর্ধনার প্রদানের স্মৃতিময় দিনটি আমরা রচনা করতে সমর্থ হই। ফেনীর সবচেয়ে নামী রেস্টুরেন্ট ইস্টিশন-এর দরবার হল সেদিন সেজেছিল ভিন্ন সাজে। সে সময় আর কে শামীম পাটোয়ারীর সম্পাদনায় সংগঠনের প্রকাশনা দূরযাত্রার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়—‘কবি জাহিদুল হক ক্রোড়পত্র’ হিসাবে। ফেনী সাহিত্য সভার পক্ষ থেকে কবির হাতে সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন কবির সমকালীন সুহৃদ-বন্ধু-সংস্কৃতি সমাজ। ফেনী সাহিত্য সভা সেদিন কবির কাছে করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছিল এই দেরি জনিত আমন্ত্রণে। অনুষ্ঠানে কবির ওপর নির্মিত কুড়ি মিনিটের তথ্যচিত্র—‘একটি পায়ের গল্প ও বেহেশতের পথ’—প্রদর্শিত হয়। হল রুম ভর্তি ফেনীর সংস্কৃতি সমাজ কবিকে অভিনন্দিত করে, কবির সম্মানে নৈশভোজে অংশ নেয়। আমরা স্বস্তি লাভ করি এক দায়মুক্তির গৌরবে। দীর্ঘ বেদনাবিদ্ধ কষ্ট মস্তিষ্কের ভেতরের অপরূপ চাঁদ হয়ে জাহিদুল হক ফেনীর আকাশে স্মৃতি হয়ে ঝুলে আছে। এইবা কম কি!

 

|| দুই ||

গত শতকের ষাট দশকে আবির্ভূত কবি জাহিদুল হকের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে দৈনিক সংবাদের ঈদ সংখ্যায়। তখন তিনি ফেনী সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। প্রথম কাব্য পকেট ভর্তি মেঘ প্রকাশ হয় নিজ সময়ের দু-দশক পর ১৯৮১ সালে। এতে তার প্রস্তুতি ও আত্ম-আবিষ্কারের ধীরতা লক্ষণীয়। তিনি হাঁটা দিয়েছিলেন কাছিমের চলন রীতিতে! ফলবিজয়ী ভাগ্য। কবি নিজেই বলেছিলেনকবিতা একটি হারামজাদা ধরনের ভাষাশিল্প।

জাহিদুল হকের কবিতাসংগ্রহ গ্রন্থে পরিচয়জ্ঞাপক কথনে উল্লেখএক দূরাগত কান্না, ভাঙন আর প্রেমকে রক্তাপ্লুত হয়ে উপস্থাপিত হতে দেখি আমরা জাহিদুল হকের কবিতার শব্দগুচ্ছে। কবিতাসংগ্রহ-এর কবিতায় এই কবির এক জীবনের নানান অচেনা প্রদেশকে আমরা দরোজা খুলতে দেখি, কখনো দরোজা খুলবার শব্দে উদ্বেগাকুল হই। তাঁর কবিতার সকল অর্থ যেন এক অর্থহীনতায় গিয়ে পৌঁছয়, পৌঁছয় এক মুখর নীরবতায়, কিন্তু প্রবাহিত করতে থাকে এক পবিত্র শোককে অন্তহীনভাবে।

জাহিদুল হকের কবিতার শরীর ভাস্কর্যের মতো তীব্র ও নিস্তরঙ্গ, কিন্তু ভেতরে এক রক্তাপ্লুত ফল্গুধারা প্রবহমান। জাহিদুল হকের কবিতা আজকের দিনের কবিতা কিংবা আগামী দিনের কবিতা তাঁর কবিতা। তাঁর কবিতা প্রতিটি আগামী দিনকে অতিক্রম করতে থাকে যেন কার উদ্দেশে, কার খোঁজে! কবি জানেন কান্না, ভাঙন আর প্রেমের বাড়িগুলোর দরোজা খুলতে খুলতে, এই খোঁজ না করলে অমন পবিত্র শব্দগুচ্ছ উচ্চারিত হতে পারে না। সমগ্র বাংলা কবিতায় এই কবিতাসংগ্রহ-এর কবিতাগুলো নিতান্তই অচেনা এবং অচেনা বলেই নতুন।   

দূরাশ্রয়ী এ কবির কবিতায় প্রিয় অনুষঙ্গ হিসাবে মেঘ, বৃষ্টি, বাড়ি, নিসর্গ, ঋতু, নদী, লোকালয়, ট্রেন ও বিশ্বখ্যাত নানা কবি-শিল্পীর নাম বার বার এসেছে। যাতে এসব চিত্র ও ব্যক্তির সঙ্গে তার চিন্তার একাত্মতা সহজেই অনুভূত হয়। সমকালীন বাংলা কবিতার উল্লম্ফন থেকে নিজেকে সযত্নে দূরে রেখে একটি নির্জনতা রচনা করেছেন তিনি। কবির পাঠকেরা অবগত রয়েছেন যে, তিনি ধ্রুপদী ধারায় নিজেকে নিষ্ঠ করেছেন। তবে সমকালীনতাও উঠে এসেছে, যদিও অপরাপর কবিদের মতো তিনি সমকালীনতা বিস্তৃত ক্যানভাসে আঁকেননি। তা এসেছে একান্তই নিজের মতো করে, মৃদু ও ছোট্ট সংকেতে। আগেই বলা হয়েছেতিনি উচ্চকণ্ঠ পরিহার করে ছুটেছেন গীতল নদীর স্বচ্ছ ধারায়। এ ধারা কখনও ধীর রূপে, কখনওবা সর্বপ্লাবী জোয়ারের অনুভূতিতে কিনারে আছড়ে পড়েছে জোরছে।

আমাদের সকল সুন্দরের মর্মে বেদনার গুঞ্জরণ কবি জাহিদুল হক শিল্পী জীবনের শুরুতেই অনুভব করতে পেরেছিলেন। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের মেধাবী ছাত্র হিসাবে সঙ্গত কারণেই তিনি ছিলেন বিশ্ব সাহিত্যের সমঝদার পাঠক, যা তার শেষ জীবনব্যাপী অনুরণিত হয়েছে। ফলে প্রতি মুহূর্তে ক্রমক্ষয়িষ্ণু জগৎ তার কাছে ধরা দিয়েছে চিরায়ত আনন্দ-বেদনার রঙে। আত্মা দিয়ে অনুভব করেছেন সেসব সুর, ঘুরে বেরিয়েছেন সে সুরের সন্ধানে বাস্তব ও কল্পনার মায়াচ্ছন্ন জগতে। খুঁজে ফিরেছেন নিজের শৈল্পিক নিয়তি। যেখানটায় তিনি শুধু সফলই হননি, স্বার্থকও। কবির বাইরে একজন সৃষ্টিশীল গীতিকার, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হিসাবেও তিনি ছিলেন সমানভাবে আদৃত।    

ভ্রমণের প্রতি কবির আকণ্ঠ তৃষ্ণা বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে। তার কবিতায় পৃথিবীর নানা জনপদের নাম ঘুরে ফিরে আসে। এটিকে আরোপিত ভাবা ভুল হবে। মনে হয় একটি পেলব আচ্ছন্নতা তাকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখে, কল্পনার অধিবাসে। কবির এ শিল্পভ্রমণে ট্রাজিক জীবনবোধের নানা অনুষঙ্গ থরে থরে ফুটে রয়েছে। বিবিধ চিত্রকল্প [যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজস্ব] ও রূপকের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে সমকালীনতা থেকে স্বেচ্ছায় সটকে পড়ে চিরকালীনতার সুর বাজিয়ে দেন। এ বাদনে তার আঙুল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অব্যর্থ।  

নিজের লেখা গানের বাণীর দিকে তাকিয়ে আছেন কবি

আমাদের মতে, এটি কবি জাহিদুল হকের বিশিষ্টতা যে, যেখানে তার সমকালীন কবিরা দ্রোহে উচ্চ, সেখানে তিনি নিম্ন। অন্যরা অশান্ত, তিনি শান্ত। তা যে কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রেপ্রেম, আন্দোলন, সংগ্রাম বা মুক্তিযুদ্ধ যা-ই হোক না কেন। শেষ পর্যন্ত তা সর্বমানবিক রসে সিক্ত হয়ে পড়ে। মা ও মাতৃভূমি একাকার হয়ে নতুন রূপ নির্মিতি পেয়েছে বসতি কবিতায় 

মাঝে-মধ্যে বাড়িটা বিক্রির কথা ওঠে,
এ-ও এক দ্রোহ, বুঝি; মা এতে দারুণ রাগ করে
ভাইদের বলে, শহরে দু’কাঠা জমি কিনবি যে,
ফের যদি যুদ্ধ হয় পালাবি কোথায়? আমি শুধু
চুপ করে থাকি, আমার স্মৃতির মধ্যে কেঁদে ওঠে 
মারণাস্ত্রে আক্রান্ত শহর: সারারাত্রি গোলাগুলি ... 
মানুষ পালাচ্ছে শুধু গাঁও-গেরামের
দিকে! কিন্তু গ্রাম যুদ্ধের সীমানা থেকে বহু দূরে
ভেবেছো মা? বিশেষত এইবার যদি যুদ্ধ হয়? ... 
অই ম্লান রঙচটা সুতির আঁচলে ঢেকে রেখে
কী করে বাঁচাবে তুমি তোমার ছেলেকে? পারবে না।
মারণাস্ত্র কেড়ে নিচ্ছে তোমার চুম্বন, ভয়ঙ্কর
এই নদী ভেঙে দিচ্ছে তোমার স্বামীর ভিটেবাড়ি,
চারিদিকে যুদ্ধ হচ্ছে, জ্বলছে শহর, তোমাদের
অবিরত চোখের পানিতে কিছুতেই ভিজবে না
পৃথিবীর তাবৎ বারুদ। 

এ কবিতা প্রসঙ্গে সাইমন জাকারিয়া বলেন, কবি নিজেই একটির পর একটি প্রশ্ন করে ভবিষ্যতের পথকে বিপদসংকুল বলে শনাক্ত করেন।... অনুভব ও ইতিহাসবোধ দিয়ে উপলব্ধি করেন শুধু। [পূর্বাপর, ১১ আগস্ট ২০২১] জাহিদুল হক একটি নিজস্ব কাব্যভাষা তৈরি করেছেন। সরল অথচ গভীর। এবার দেখব কবির কয়েকটি কবিতাচিত্র। জাহিদুল হকের সংবেদন বোঝা যায় নিচের পঙ্‌ক্তিগুলোয়

বাড়ির পাশেই নদী, বলা যায়
এই বাড়ি নদীর কাঁখের পরে কলসের মতো
যেন বসে আছে, চুপচাপ, ভেতরে কাজল ব্যথা। 
[বসতি]


এখনো আকাশে আধখানা চাঁদ
মনে হয় প্রস্তরখণ্ড:
যেন কবেকার পশু শিকারের অস্ত্র! 
[জাতিস্বর]


রাত্রি হয়, রাত হয়, রাত্রের শেষ আজানের মতো কেঁদে কেঁদে
         রাত বাড়ে ঝিঁঝিঁ পোকা নৈঃশব্দের উঠানে! 
[ফেরা] 

৪ 
একদিন দেখা হবে, নিশ্চয় কখনো তোর সাঁই
দরদিয়া দরদে কালিন্দী-জলে দেখা দেবে ফের 
[একদিন দেখা হবে]


তোমার আংটির আলো পড়ে পড়ে 
সমস্ত শহর যেন প্রাচীন ধ্রুপদ
স্থাপত্যের নিদর্শনে ভরে যায়;
আমি কিছু কারুকার্যে টোকা মেরে যাই,
তখনই নূপুর বাজে, মনে হয় প্রকৃত জীবন বলে সত্যি কিছু নাই
এ জীবনে; তুমিও প্রতীক: ভালোবাসা কিংবা এই তোমার আড়ালে থেকে
অনুসরণের কাজ। 
[প্রতীক]


আমার মৃত্যু হলে দেখবো তোমার গন্ধ
থমকে দাঁড়িয়ে আছে বিছানার পাশে,
দেখবো তোমার চোখে একটি গোপন কান্না
আশ্চর্য মুক্তোর মতো জ্বলে উঠেছে,
মানুষেরা দুঃখ পায় বটে, আমার মৃত্যু হলে দেখবো
এতদিনে সেই দুঃখ সুন্দর হয়েছে! 
[আমার মৃত্যু হলে দেখবো] 


তোমার ড্রয়িংরুমে ছড়ানো আতরে
খোশবু নেই বলে নেই শিল্পেরও সম্প্রীতি
আমার খোশবুর মধ্যে ফুটে ওঠে জান্নাতুল
আমার খোশবুর মধ্যে ছোটে এক
         ব্যথিত দুলদুল
আমার আঙুল ছুঁয়ে পাথরেও
       ফুটে ওঠে ফুল
মাঝে মধ্যে মরে যাই তোমার সুন্দর নূরে
নূর হয়ে যাই আমি বুকের অঙ্কুরে
খোশবুতে বেহুঁশ ক্ষেতে কখনো গোলাপ ফুল
                ফুটে উঠি 
হে বেহেশ্‌ত, আল্লার রসুল 
[হে বেহেশ্‌ত আল্লার রসুল] 

প্রেম, রোমান্টিকতা, সমাজচেতনা, দেশপ্রীতি, অধ্যাত্মচেতনাসবকিছুতেই বিষাদের বিলম্ব ছায়া রেখাপাত করে কবির কবিতায়। প্রচার মাধ্যমের কাছে থেকেও অতি প্রচারণা থেকে ছিলেন অনেকটা দূরে। যা প্রকৃত শিল্পী মাত্রেরই আকাঙ্ক্ষা। তার বন্ধুর সংখ্যা অনেক। কিন্তু তিনি তো জানেন [কবির ভাষায়]—‘কপট পাঠক, দোসর, যমজ ভাই-য়েরা তার বিষয়ে থাকবে নিশ্চুপ। ফলে তাকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয়নি এ যাবৎ। এছাড়া তার লেখা আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়, কথা দাও কথাগুলো ফেরত নেবে নাসহ বেশ কিছু গান যুগপৎভাবে জনপ্রিয় ও দীর্ঘস্থায়ী আসন পাওয়ায় কেউ কেউ তাকে কেবল গীতিকার ঠাহর করলেও তিনি বলতেন, আমি মূলত কবি। তার এ বচনের পক্ষে জ্বাজল্যমান সাক্ষীতার কবিতা। 

জার্মানির বন শহরে বিশ্বখ্যাত সুরস্রষ্টা বিটোফেনের ভাস্কর্যের সামনে জাহিদুল হক

 

|| তিন ||

কবির নয়টি কাব্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে কবিতাসংগ্রহ [২০১৯]। জানা যায়, এর প্রথম চারটি কাব্য [পকেট ভর্তি মেঘ, নীল দূতাবাস, তোমার হোমার, সেই নিশ্বাসগুচ্ছ] কবি রচনা করেছেন ষাট, সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশে থাকাকালে। আর পরবর্তী পাঁচটি কাব্য [পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা, এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা, নের্ভাল কোথায় যাচ্ছো, বারান্দায় আমি ও রাত্রিরা একা, কেন করে তোলো ঢাকাকে একাকী] কবি রচনা করেন ইউরোপে প্রবাসকালে। তখন তিনি জার্মানির কোলনে রেডিও ডয়েচে ভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসাবে কর্মরত [১৯৮৯১৯৯২]।  

আন্তর্জাতিকতা বোধ তাড়িত জাহিদুল হকের কবিতায় লক্ষণীয় হয়ে ওঠে চিরকালীন মনন, যদিও যা আধুনিক শিল্পচৈতন্যের জ্বরে দ্বিধাহীনভাবে আক্রান্ত। ফলে তিনি সমকালীনতাকে সাক্ষী করেই বিনির্মাণ করেন বাংলা কবিতার নতুন ডিসকোর্স। যা তার সমকালীন কবিদের যে কারো মধ্যেই এই বৃহৎ সেতুবন্ধের জগৎ প্রায় অনুপস্থিত। ব্যক্তিগত বিষাদ ছাপিয়ে তার কবিতা মূর্ত হয়ে ওঠে সামষ্টিক মানবমন রচনায়। প্রথম দিকের কবিতায় কবির আন্তর্জাতিক মনন প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল হাই লিখেছেন

যেখানে নজরুল ইসলামের পাশাপাশি রিল্কে, রেমব্রাঁ, রাফায়েল এসেছেনকচ-দেবযানীর সঙ্গে দেখা যায় বাগদাদের আবুল হোসেনকেও। ...এর আগে আর কারো কবিতায় দেখিনি; দেশি এবং বিদেশি রেফারেন্স এবং উপমার একসঙ্গে ব্যবহার। এইভাবে তিনি স্থান এবং কালের সীমানা মুছে দিয়েছেন। একটা দৃষ্টান্ত: তুমি সেই সুখ, নজরুল দেখেছিলো যাকে/ কুমিল্লায় বৃষ্টিতে মুখর/ তুমি সেই সুখ, রিল্কের বুকের মধ্যে/ একদা যে সুখ পুড়ে গিয়ে ফুটেছিলো সোনা।...

হ্যাঁ, প্রকৃত আধুনিক কবিতা তো বিপর্যয়কারী কবিতাই। যে কবিতাগুলোকে আমরা জাহিদুল হকের পঙ্‌ক্তিমালায় বার বার উৎকীর্ণ হতে দেখি। একটি প্রেমের কবিতায় তিনি লেখেন: ভালবাসা নামে আমাদের যেই দেশ/ বাংলাদেশের মানচিত্রের মতো/ সেই দেশ যেন আমাদেরই দেশ হয়। তারপর তিনি বলেন, এসো হাত ধরি প্রেমের অধিক গানে/ আমাদের গান শস্যের প্রার্থনা। কিন্তু আরেক কবিতায় কবি উচ্চারণ করেন: জীবন ভাঙন, সিঁড়িগুলো ভেঙে তবুও মর্ত্যতাতে/ ভেনাস, তোমার প্রেমে পড়ি আমি তুমি চির-গান, সাধা। এই একই কবিতার শুরু হচ্ছে: মোৎসার্টের বাড়িতে সুরের পরিগুলো খুব ওড়ে/ আমি ঈন-নদী পেরিয়ে তোমাকে খুঁজেছি শোকের মোড়ে;/ স্টান্সি এখন কী করে রোদনেসিম্ফনিগুলো ছুঁয়ে/ তুমিও কী করো, যখন স্মৃতিরা কী বিরোধে শুধু পোড়ে! ...

তোমাকে অমর করে রাখি/ মনে নয়, শিল্পে/ গোলাপ কাঁটায় নয়/ যুদ্ধে আর শিল্পে ছিন্ন এ যুগের রিল্কে।... তুমি যাবে কই? কই যাবে? তুমি তো আমারই/ রক্তমাংসে মিশে আছো, বসে আছো স্বপ্নের ভেতরে।... জন্মদিন নামের কবিতায় কবি লেখেন: আজ আমার জন্মদিন; পারী শহরেও/ শার্লকিম্বা মস্কোতে দস্তয়েভস্কি ঠিক/ আমারই মতন জন্মাচ্ছেনদিগ্বিদিক;/ পাতাঝরা সুদ্ধ করে আমাকে সন্দেহ! ...

স্টিমারে নিজ গ্রামে যেতে যেতে তিনি দেখেন মায়ের মুখের মতো আশেপাশে কয়েকটি দুঃখিত গ্রাম। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বসতি শিরোনামে যে কবিতা লিখেছেন সেটি ভাবনার ব্যাপকতা এবং ক্ষোভের তীব্রতায় তুলনাহীন: আমি দেখি কী মলিন এই গ্রাম/যার দিকে ছুটে আসে নির্মম হনন/ আসে বন্যা, মারি ও মড়ক, কালে ভদ্রে আমি আসি বিপন্ন শহর থেকে/ অকাল বৃষ্টির মতো আসে রাজনীতিবিদ—’। গ্রামের দুরবস্থা দেখে কবির আক্ষেপ: তবু কেন যুদ্ধোত্তর এই বাংলাদেশে আমি শুধু ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটি? এই কি জীবন তবে? [কাব্যশীলন, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০] 

কবির প্রবাস থাকাকালে রচিত কাব্যগ্রন্থ প্রসঙ্গে হাসনাত আবদুল হাই আরো লেখেন

সৃজনশীলতার সঙ্গে মননশীলতার প্রয়োগ জাহিদুল হকের কবিতাকে একান্তভাবে বিশিষ্ট করেছেএই উপলব্ধি দৃঢ় হয় কবিতাসংগ্রহ-এর শেষ পাঁচটি বইয়ের কবিতা পড়ার পর। তিনি যতটা আবেগপ্রবণ তার চেয়ে বেশি কবিতার প্রকরণ ও আঙ্গিক সচেতন। নির্মেদ এবং ভাস্কর্যের মতো তার কবিতার শরীর। শব্দের নির্বাচন, বাক্যগঠন এবং ছন্দোময়তা তার কবিতাকে দিয়েছে অনন্যতা। তার মানসলোকের প্রফুল্লতা এক অন্তর্লীন বেদনার হাত ধরে ব্যক্ত হয় আত্মগত স্বরে, নির্লিপ্ত উচ্চারণে। তিনি কবিতায় স্বতস্ফূর্তভাবে একই সঙ্গে কাছের এবং দূরেরএকাকি, নিসঙ্গ এবং ঘরোয়া। তুল্যমূল্যে কবিতার অনুপুংখ রূপের কাছেই তার মনের উদ্বেলিত ভাব সমর্পিত। অন্তিম বিচারে তার কবিতার রূপবাদ তার হৃদয়বাদকে অতিক্রম করে যায়।

প্রথম পর্বের আলোচনার শুরুতেই বলা হয়েছে, জাহিদুল হকের কবিতায় আন্তর্জাতিকতাবোধ আর আধুনিকতার বোধটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই প্রবণতা ও  বৈশিষ্ট্য আরো স্পষ্ট হয়েছে সংকলনের শেষের পাঁচটি বইয়ের কবিতায়, যে কবিতার বইগুলো তিনি লিখেছেন ইওরোপেতার প্রবাস জীবনে। একজন কবি আন্তর্জাতিক হতে পারেন একাধিকভাবে। প্রথমত, শিল্প-সাহিত্যের বৈশ্বিক ঐতিহ্য মনে রেখে তার অন্তর্গত সৃষ্টি ও স্রষ্টাদের উল্লেখে, যা স্বদেশে থেকেই করা যায়। দ্বিতীয়ত, এই প্রচলিত আন্তর্জাতিকতাবোধের পাশাপাশি প্রবাসে জীবনযাপনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেবিদেশের মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারি, সেমিট্রিসমূহ ও ফিলহার্মোনির গহন থেকে তুলে আনা অপরূপ দেখা ও শোনাগুলোকেও উপজীব্য করেনিসর্গ, লোকালয়, মানুষ ও তাদের জীবনকে উপজীব্য করেও। জাহিদুল হকের আন্তর্জাতিকতা এই উভয়কে নিয়ে। তবে স্বদেশে থাকার সময় যা ছিল অর্জিত অভ্যাস ও চর্চা, প্রবাসজীবনে তা হয়েছে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ফল ও ফসল এবং সেই কারণে আরো ব্যাপক এবং বলা যায়, প্রায় সর্বগ্রাসী! এর ফলে শুধু তার কল্পনার বিস্তার ঘটেনি, মননের জগতও, ইংরেজিতে যাকে বলে universe of discourse প্রসারিত হয়েছে দ্রুতগতিতে। [দূরযাত্রা, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩]   

কবির কবিতানুভবের কয়েকটি স্পর্শচিহ্ন নিচের রূপ—

ক. মায়ের মুখের মতো দুঃখিত গ্রাম
খ. দুঃখে মলিন হয়েছে শালিকের মতো
গ. শূন্য টবের মতন ফুটেছে চাঁদ
ঘ. তোমার চিবুকে ওটা তিল নয়, ছোট্ট কালো মাছি
ঙ. এখনো বুকের মধ্যে নৃত্যপটিয়সী সুন্দরী কমলার মতো নাচে
চ. ইবনে বতুতার মতো হেঁটে হেঁটে
ছ. আজকে সমস্ত দিনটাকে খুব তুমি মনে হলো
জ. কাকটিকে মনে হচ্ছে হোমারের কোনো চোখ
ঝ. আমার তুমুল ইচ্ছেগুলো রুই-কাতলের মতো তুলে আনো বিমুখ ডাঙায়  

জাহিদুল হকের এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা-৩ কবিতাটি নিচে তুলে দেওয়া হল

লোরকা আমার কবিতার পঙ্‌ক্তিরা
          গেরিলার মতো খুঁজবে তোমার খুনিকে
যুগ থেকে যুগে সেই ক্রন্দনধ্বনিকে
           ব’য়ে নিয়ে যাবে শিরায় কঠিন পীড়া
পাহাড় ঝর্না অলিভের ঝোপে
          তুলবে ঘূর্ণি হাওয়া

এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা
বার্সেলোনায় গ্রানাডায় আসা-যাওয়া—

উল্লেখ প্রয়োজন, জাহিদুল হকের কবিতাসংগ্রহতে ভুক্ত হয়েছে ৯টি কাব্য। কবিতাসংগ্রহে না-থাকা প্রকাশিত অপর ৪টি কাব্যএই উৎসবে আমি একা, অন্ধকার বৃষ্টিগুলো, মিকেলাঞ্জেলোগুচ্ছ ও অন্যান্য সনেট, নির্বাচিত কবিতা। জাহিদুল হকের গল্পসমগ্রতে [২০১৮] দুটি গ্রন্থ ভুক্ত হয়েছেব্যালকনিগুলো [১২টি গল্প], আমার ভালোবাসার অটম [১২টি গল্প] ও অগ্রন্থিত গল্প অংশে মুদ্রিত হয়েছে ৪টি গল্প। প্রকাশিত পাঁচটি উপন্যাসআমজাদ আলীর মেঘবাড়ি, শোকার্ত বিবাহরা, তোমার না আসার বার্ষিকী, নের্ভাল কোথায় যাচ্ছো ও প্রেমকে করেছি বাড়ি। সব মিলিয়ে গ্রন্থ ২২টি। জনপ্রিয় গানের মতো জাহিদুল হকের কবিতা এক মর্মভেদী আবেদন সৃষ্টি করেছে। যেন পাথরের মতো লাবণ্যময় চোখ, ব্যক্তির অন্তরাল থেকে সৃষ্টিকেই শিল্পের দৌড়গোড়ায় পৌঁছায়। তিনি ইহকাল ত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার রেখে যাওয়া সৃষ্টি আমাদের দেখাবে, ভবিষ্যতেই।