বুকারজয়ী অনুবাদক মাইকেল হফম্যানের সাক্ষাৎকার
|| মাইকেল হফম্যান ||
মাইকেল হফম্যান ১৯৫৭ সালে জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর পরিবার যুক্তরাজ্যে অভিবাসী হন। হফম্যান একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। পোয়েট্রি ফাউন্ডেশনের মতে, ইংরেজি সাহিত্য জগতে হফম্যান সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী জার্মান অনুবাদক। তিনি জার্মান থেকে সত্তরটির বেশি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। বিশেষ করে হ্যান্স ফালাদা, ফ্রানজ কাফকা, আর্নস্ট জুঙ্গার, জোসেফ রথ ও ভিম ভ্যানডারসের লেখা উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য সমালোচক ও অনুবাদক হিসাবে তার লেখা লন্ডন রিভিউ অব বুকস ও পোয়েট্রি ম্যাগাজিনে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। হফম্যান ১৯৯৫ সালে তার পিতা গার্ত হফম্যানের লেখা ‘দ্যা ফিল্ম এক্সপ্লেইনার’ উপন্যাসের অনুবাদক হিসাবে ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেন ফিকশন প্রাইজ লাভ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে নোবেল জয়ী জার্মান ঔপন্যাসিক হেরিটা মুলারের উপন্যাস ‘দ্যা ল্যান্ড অব গ্রীন পামস’-এর অনুবাদক হিসাবে আন্তর্জাতিক ডাবলিন লিটারারি এওর্য়াড লাভ করেন। তিনি ২০১৮ সালে আর্ন্তজাতিক বুকার পুরস্কারের বিচারকমন্ডলীর সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। ২০২৪ সালে জার্মান ঔপন্যাসিক জেনি অ্যারপেনব্যাবের ‘কায়রোস’ উপন্যাসের অনুবাদক হিসাবে যৌথভাবে আর্ন্তজাতিক বুকার পুরস্কার লাভ করেন।
|| সম্পাদকীয় নোট ||
মাইকেল হফম্যানের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন প্রতিধ্বনি পত্রিকাকে সাক্ষাৎকারটির বাংলা অনুবাদ ও প্রকাশের কপিরাইট প্রদান করেছে। আমরা বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশান ও মাইকেল হফম্যানের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ। প্রতিধ্বনির জন্য এটি অনুবাদ করেছেন লেখক ও সমালোচক পলাশ মাহমুদ।
বুকারজয়ী অনুবাদক মাইকেল হফম্যানের সাক্ষাৎকার
প্রশ্ন: আর্ন্তজাতিক বুকার পুরস্কার ২০২৪ সালের দীর্ঘ তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হয়ে আপনার অনুভূতি কেমন? এটা এমন একটা পুরস্কার যেখানে মূল লেখক ও অনুবাদককে সমানভাবে সম্মানিত করা হয়। বুকার বিজয়ী হওয়াটা আপনার জীবনে কি কোন বিশেষ অর্থ যোগ করবে?
মাইকেল হফম্যান: আমি পুরস্কারটিকে গ্রন্থ, লেখক ও অনুবাদক এই তিনটির ক্রমানুসারে দেখতে চাই। এ রকম একটা দুঃসাহসী ও চমৎকার উপন্যাসের অনুবাদ কর্মে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছি। মূল লেখকের সাথে মর্যাদার মঞ্চে সমান অংশীদার হওয়ার সুযোগ একজন অনুবাদকের জন্য খুবই বিরল ও চমৎকার বিষয়।
প্রশ্ন: উপন্যাসটি অনুবাদ করতে কত সময় লেগেছে? আপনার অনুবাদের কর্ম-প্রক্রিয়াটা কেমন? আপনি কোনো বই অনুবাদ করার পূর্বে কতবার পড়েন? মূল উপন্যাসটি যেভাবে লেখা হয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় কি অনুবাদ করেন?
মাইকেল হফম্যান: আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। সম্ভবত এক বছরের মতো হবে। আমি অনুবাদ করার পূর্বে একবার পুরো বইটি পড়ি। কিন্তু তা সবসময় নয়। আমি বরং ইংরেজিতে অনূদিত লেখাটা কয়েকবার পড়ি। সংশোধনের জন্য ২০ বারের মতো পুনর্পাঠের করি। লেখালেখির শুরু থেকেই আমি এই চর্চাটা করে আসছি।
প্রশ্ন: বই ছাড়া আপনি অন্য আর কোন কোন সৃজনশীল মাধ্যম থেকে আপনার অনুবাদ কর্মের জন্য প্রেরণা খুঁজে পান?
মাইকেল হফম্যান: লেখালেখি ছাড়া, আমি জীবন থেকে আমার কাজের প্রেরণা সন্ধান করি। জেনি অ্যারপেনব্যাকের মতো আমার পরিবারের মূলও পূর্ব-জার্মানিতে গ্রোথিত। পূর্ব-জার্মানির সাথে আমি পূর্বপরিচিত ছিলাম। তাছাড়া অ্যারপেনব্যাকও আশি ও নব্বই দশকের পূর্ব-জার্মানি সর্ম্পকে আমাকে বর্ণনা দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন: আপনার পাঠক হওয়ার পথে জার্নিটা কেমন ছিলো? শৈশবে আপনি কি ধরনের বই পড়তেন? গল্প-কাহানি আপনার কৈশোর মনে কেমন প্রভাব ফেলেছে? এমন কোন একক বই আছে কি যা আপনার কল্পনার রাজ্যকে শাণিত করেছে?
মাইকেল হফম্যান: আমার বাবা, গার্থ হফম্যান, ছিলেন জার্মান ঔপন্যাসিক। এরকম সাহিত্যের আবহে বড় হলে হয় আপনি সাহিত্যকে আকড়ে ধরবেন, না হয় আপনি ভিন্ন স্রোতে গা ভাসাবেন। আমার কাছে অন্য কোন পথ খোলা ছিলো না। তাই আমি সাহিত্যকেই আলিঙ্গন করেছি।
প্রশ্ন: আপনার অনুবাদক হওয়ার পেছনের গল্পটা আমাদের একটু বলেন। এমন কোন বিশেষ বইয়ের কথা বলেন যা অনুবাদকের পেশায় যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে উৎসাহ যুগিয়েছে।
মাইকেল হফম্যান: আমরা বাড়িতে জার্মান ভাষাতেই কথা বলতাম। আমি ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাস্টে দোভাষী পরিবেশে বড় হয়েছি। যখনই আমি একজন শুদ্ধ জার্মান হওয়ার প্রচেষ্টা ত্যাগ করলাম, তখন থেকেই আমি নিজের ইচ্ছায় জার্মান বই পড়া আরম্ভ করলাম। শুরু থেকেই আমি জানতাম যে দোভাষী হওয়ার কারণে আমি অনুবাদক হইনি। কোথায় যেন এর আগে আমি বলেছিলাম; অনুবাদক হওয়া আমার জন্য ‘কোন স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা না বরং একটি আকস্মিক ঘটনা। অনুবাদ আমার কাছে আকাশে ছোঁড়া শব্দের মাইনের মতো। এটা অনেকটা পূর্ব-জার্মানীয় বিষয়।’
প্রশ্ন: স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আপনি সাধারণত কি পড়ে থাকেন? আপনি বর্তমানে কোন বই পড়ছেন এবং কেন?
মাইকেল হফম্যান: আমার কাছে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে কিছু নেই। আমি সাধারণত আমার লেখালেখির কাজে বেশি পড়ি। আনন্দের জন্য খুব কমই পড়া হয়। কাজের জন্য পড়লেও আমি এটা খুব উপভোগ করি। বর্তমানে আমি রাশিয়ান ঔপন্যাসিক আন্দ্রেই প্লাতোনভের লেখা পড়ছি।
প্রশ্ন: ইংরেজি ভাষার পাঠকদের জন্য জার্মান ভাষার কোন গ্রন্থটি পড়ার পরামর্শ দিবেন? এই বইটি আপনার উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলেছে?
মাইকেল হফম্যান: তাহলে প্রথমেই আমি হান্স জোয়াচিম শাডোলিখের ‘তালহোভার’ উপন্যাসটির কথা বলবো। এটা একজন জার্মান গোয়েন্দা পুলিশের কাহিনি যিনি প্রায় ১৫০ বছর বেচেঁছিলেন। তার কাজের দক্ষতা ছিল মারাত্মক। কর্মক্ষেত্রে তার প্রয়োজন শেষ হচ্ছিল না। তাই সে জীবনকে সেভাবেই যাপন করছিল।
প্রশ্ন: এমন কোন অনূদিত উপন্যাস কি আছে যা আপনি অনুবাদ করার সুযোগ পেলে ভালো হতো মনে করেন? যদি থাকে, তাহলে এর কোন দিকগুলো আপনার কাছে প্রশংসনীয় বলে মনে হয়?
মাইকেল হফম্যান: প্রাউস্ট! প্রাউস্ট!
প্রশ্ন: আর্ন্তজাতিক বুকার পুরস্কৃত বা সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত কোন উপন্যাসটি আপনার কাছে প্রিয়? যদি থাকে তাহলে ঠিক কেন প্রিয় বলবেন কি?
মাইকেল হফম্যান: জেসিকা কোহেনের অনূদিত ডেভিড গ্রসম্যানের ‘অ্যা হর্স ওয়াকস ইনটু আ বার।’ কারণ এটা খুবই মজার একটি উপন্যাস এবং কৌতুকগুলো মারাত্মক।
প্রশ্ন: সর্বব্যাপি ও বৈচিত্র্যময় সাহিত্যিক ধারাকে বিশ্বপাঠকের কাছে নিতে কথাসাহিত্যের অনুবাদ কি রকম অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন? আরো বেশি পাঠককে অনূদিত গ্রন্থ পড়ায় আগ্রহী করে তুলতে আমরা কিভাবে প্রেরণা দিতে পারি?
মাইকেল হফম্যান: খুবই ক্রিটিকাল। অনুবাদকর্ম ভিন্নতা ও ব্যবধানকে এক বিন্দুতে নিয়ে আসে। আমাদের সহমর্মিতা শেখায়। বইহীন জগতে ব্স করলে আপনি নিজেকে আপক্ষিকতার জঘন্য নির্বুদ্ধিতায় নামিয়ে আনবেন। অনুবাদহীন জগতে ঢুকলে আপনি আপনার সম্পর্কে কোন বই পাবেন না।
কপিরাইট বুকার © বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশান
বাংলা কপিরাইট © প্রতিধ্বনি
পড়ুন ► বুকারজয়ী ঔপন্যাসিক জেনি অ্যারপেনব্যাকের সাক্ষাৎকার
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন