বর্ণচ্ছটা ও অন্যান্য কবিতা

|| বিউনী ||
ভোরের ঘ্রাণ নিতে নিতে
বুক ভরে যায় আলোয়—
সে আলোয় আঁকছে আকাশ
নিভু নিভু রেখার ছুটোছুটি
পাখিদের পালক শীতল
উড়তে উড়তে ওরাও ভাবে—
আজ কোন দিন, দিগ্বিদিক
ছড়িয়ে পড়তে হচ্ছে দুনিয়াতে
পাখিদের মন হয়তো এখন
কোনো সবুজের ডাল, দেখেছে কাল
হয়তো চোখ ইশারায় পথে পথে
নীড় বুননের বৃক্ষ শাখা খুঁজে ফেরে
আকাশ রেখায়, বর্ণচ্ছটায়
ঘাসের গায়ে বিন্দু-ফুল ফোটে
রোদ ডাকলেই সেই ফুলের দল
বুক পেতেই জল লুকিয়ে রাখে।
|| সরলপথ ||
নদী
আঁকবো বলে
পথ
যাচ্ছে দূরে
স্মৃতি
ভেসে আসে
তুমি
ধ্রুবক হলে
আমি
ধ্রুপদি বলে
ছন্দ
মিলেছে অন্ত্যমিলে
চিঠি
ভাঁজ খোলে
প্রেম
আগন্তুক বলে
সমুদ্র
জাগছে গালে
গোলাপ
বিনিদ্র আচ্ছন্ন
আমরা
অনঙ্গ ইন্দ্রিয়জ
তিলক
মত্ত নীলোৎপল
|| বৃষ্টি আসতেছে ||
বৃষ্টি আসতেছে এইদিকে,
এইসকল মেঘলা দিনে
আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।
মন ভালো নাই আসলে;
ঘুম ঘোরে বন্যায় ডুবে মরে গিয়েছিলো যারা,
জাগরণে শোক সংবাদে
স্বপ্নের ডুবে যাওয়ার আর হিসাব মিলে না।
কী একটা সময় আসলো ভেবে যাই,
ভেবে যাই কারো ভোরের দরজায়
কেউ পিঁড়ি পেতে বসে ভাবে কিনা;
কাল দিন ফুরালে কোথায় হবে ঘর
কোথায় হবে নিজের দেহ সন্ধান।
কী বিচ্ছিরি মাটি চাপা অন্ধকার।
কোথাও কেউ নাই,
এই সকল মেঘলা দিনে
আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।
কোথাও কেউ নেই, কোথাও যেতে নেই...
|| টোসডেক ||
তোমার প্রেমিকা যখন আমার পাশে এসে বসে, আমার অস্বস্তি হয়। ইচ্ছে হয় তোমাকে সটেড ভেজিটেবলের মতো সিদ্ধ করে তোমার মনের মধ্যে প্রেমিকার প্রতি যে প্রেম তা নিংড়ে ফেলে দেই কিচেনের বেসিনে। আমাকে তুমি রুড-টোসডেক বলতে পারো। তাতে কিছুই যায় আসে না আমার, আমি টলারেট করতে পারি না, কোনো অসভ্য প্রেমকে যে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখবে, একই সিগারেটে সুখ-টানে মত্ত হবে। উইড খেয়ে বলে ফেলবো, বেস্ট উইড এভার! ইচ্ছে করে তোমাকে সটেড ভেজিটেবলের মতো ভেজে উলটে ফেলে, ব্ল্যাক-পিপার ছড়িয়ে বার্বিকিউ সস মাখিয়ে খেয়ে ফেলি যেন তোমার প্রেমিকা, আমার কাছে তোমার খোঁজ করতে আসলে আর কোনোদিন তোমাকে খুঁজে না পায়।
|| ক্যান্সার গাছ ||
জীবনটার ব্যাপ্তি খুব সাময়িক
খারাপ সময়গুলো যখন আসে
চারপাশ ঘিরে আসে অন্ধকার
মুখোশের আড়ালে যে থাকে,
সেও বলে ওঠে ‘ভালো নেই’!
বন্ধন। খুনশুটি। বন্ধু সকল।
মায়া। শেকড়। শরীরের ঘ্রাণ।
নাকে-মুখে-বুকে নানা যন্ত্র
রুগ্ন শরীরে কথা বলা নিষিদ্ধ
হার্টবিট এর প্রত্যেকটা শব্দ বিট
অভিমানের পাহাড় ডুবে গেছে
কোথায় গেলো টানাপোড়েন
অসুখ। আইসিইউ। থেরাপি।
ব্লাড এক্সচেঞ্জ। টাকা। ছুটোছুটি।
সন্তান মাকে ডাকবে না ‘মা’
বাবা ডাকনামে ডাকবে না কোনোদিন
পুরো-পরিবারের যুদ্ধটা যন্ত্রণার
সংসারে নিস্তেজ হয়ে আসা শরীর
পৃথিবীতে আমরা সবাই খুব অসহায়
মায়া। সেন্স অফ লাইফ। সত্য-মিথ্যা।
লাইফ-সাপোর্ট। অফবিট। রিলিজড।
উফ। রিয়েলাইজেশন। নো মোর…
|| বর্ণচ্ছটা ||
কেন ফিরতে হয় আমাকে,
ঠিকানা মূলত স্মৃতি মাত্র,
ফলে মানুষ ফিরে ফিরে আসে একই ঘরে,
একই শাওয়ারের নিচে,
একই সাবানের ঘ্রাণে,
একই টবে লাগানো গাছেদের কাছে,
ঘরে রাখা শূন্য খাঁচা ও তার না ডাকা পাখির কাছে।
এর নাম স্মৃতি
যা আমাকে এই অসীম শহরে হারাতে দেয় না।
কাল কী হবে
শহরের দালানের ভেতর সবাই তা জানে,
তবুও মুখোশ খুলে যায়,
তবুও মুখোশ খসে যায়;
এই রাত্রির পথে পথে—
কালচে কমলা রঙের সোডিয়ামের আলোয় হাঁটতে
বড্ড আপন লাগে, এতোটা একলা হাঁটা পথ—
অনুমানহীন, অন্ধকারের স্পর্শহীন নৈঃশব্দ্যে
আজ এমনকি স্মৃতিহীন…
নোট: নুরেন দূর্দানীর কবিতাগুলো নেওয়া হয়েছে জেডপাথরের ফুল কাব্যগ্রন্থ থেকে। বইটির প্রকাশক বৈভব।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন