দ্য গ্রেট গ্যাটসবি || অষ্টম অধ্যায় || এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড
দ্য গ্রেট গ্যাটসবি || অষ্টম অধ্যায় || এফ. স্কট ফিটজেরাল্ড
|| প্রথম অধ্যায় || দ্বিতীয় অধ্যায় || তৃতীয় অধ্যায় || চতুর্থ অধ্যায় ||
|| পঞ্চম অধ্যায় || ষষ্ঠ অধ্যায় || সপ্তম অধ্যায় ||
অনুবাদ || লায়লা ফারজানা
সারারাত ঘুমাতে পারিনি; কুয়াশা-সংকেতের অবিরাম হাহাকার, অদ্ভুত বাস্তবতা আর দুঃস্বপ্নের ভীতিকর বর্বরতায় অর্ধ-অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম বিছানায়। ভোররাতে গ্যাটসবির ড্রাইভে ট্যাক্সির শব্দ শুনতেই হুড়মুড় করে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে পোশাক পরতে শুরু করি—জানি না কেন মনে হল আমার তাকে কিছু বলার আছে, তাকে সতর্ক করার বিপুল তাগিদ আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে গেল, সকাল হতে হতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
লন পেরুতেই দেখি তার সদর দরজা তখনও খোলা, হলের টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁডিয়ে আছে সে—হতাশায় নিমজ্জিত, ঘুমে পর্যুদস্ত।
“কিছুই হয়নি,” অস্বস্তির সঙ্গে বলল। “আমি অপেক্ষা করেছি, আনুমানিক চারটার দিকে সে জানালার কাছে এসে এক মিনিটের জন্য এসে দাঁড়িয়েছিল, তারপর আলো নিভিয়ে দিল।”
তার বাড়িটি আমার কাছে কখনই এত বড় মনে হয়নি যতটা না সেই রাতে সিগারেটের জন্য তার বৈঠকখানায় প্রবেশ করতে করতে মনে হল। পর্দাগুলোকে একপাশে সরিয়ে দিলাম, প্যাভিলিয়নের মতো ভারী পর্দাগুলো বৈদ্যুতিক আলোর সুইচগুলোর উপরে অসংখ্য ফুট দীর্ঘ অন্ধকার দেয়ালের মত অনুভূত হচ্ছিল—হঠাৎ একটি ভুতুড়ে পিয়ানোর চাবিগুলোর ওপর ঝংকৃত হয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ি। সর্বত্র অবর্ণনীয় পরিমাণ ধুলার বিস্তার আর বহুদিন রোদের অভাবে কক্ষগুলো ছিল গুমোট। অচেনা একটি টেবিলে হিউমিডরটিকে১ আবিষ্কার করলাম—ভিতরে দুটি বাসি শুকনো সিগারেট। তারপর আমরা বৈঠকখানার ফরাসি জানালা খুলে অন্ধকারে ধূমপান করতে বসি।
“তোমার পালিয়ে যাওয়া উচিত”, বললাম। “এটা নিশ্চিত যে ওরা তোমার গাড়িটি খুঁজে বের করবেই।”
“তুমি পালিয়ে যাও! এখনই! ওল্ড-স্পোর্ট!”
“এক সপ্তাহের জন্য আটলান্টিক সিটিতে চলে যাও। কিম্বা মনেট্রিয়াল।”
আমার প্রস্তাব সে বিবেচনাতেই আনল না। সম্ভবত সে ডেইজিকে না জানিয়ে, তার সম্মতি এবং সে কী চায় না জেনে, যেতে চাইছিল না। কোন এক শেষ আশা সে তখনও আঁকড়ে ধরেছিল, কিন্তু আমি তাকে এভাবে ঝরে যেতে ছেড়ে যেতে পারছিলাম না।
সেই রাতেই সে আমাকে ড্যান কোডির সঙ্গে তার যৌবনের সেই অদ্ভুত গল্পটি বলে—কারণ “জে গ্যাটসবি” টমের কঠোর বিদ্বেষের আঘাতে কাঁচের মতো গুড়িয়ে গিয়েছিল, তার দীর্ঘ গোপন অযৌক্তিক ব্যয় সাপেক্ষ প্রচেষ্টার সর্বাধিক ব্যয়বহুল শিকার২ আবরণ খুলে বেরিয়ে এসেছিল। ভেবেছিলাম বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে এতক্ষণে সে সব বুঝে গেছে, অথচ তখনও সে কেবল ডেইজির কথাই বলছিল। “ভালো” মেয়ের সংজ্ঞা কী, যদি সে কখনো জেনে থাকে তবে ডেইজিকেই সে প্রথম চিনেছিল। বিভিন্ন অপ্রকাশিত ক্ষমতায় এহেন ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে সে আগেও এসেছে বহুবার, কিন্তু অদৃশ্য কাঁটাতারের আড়াল নিয়ে। ডেইজি ছিল তার উচ্ছসিত আকাঙ্ক্ষার অবিচ্ছিন্ন উৎস।
ক্যাম্প টেলরের৩ অফিসারদের সঙ্গে সে প্রথম তার বাড়িতে যায়, পরেরবার একা। বাড়িটি তাকে বিস্মিত করে—এমন আশ্চর্য সুন্দর বাড়ি সে আগে কখনও দেখেনি। ডেইজি বাড়িটির বাসিন্দা—ব্যাপারটিই তার কাছে ছিল শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতির মত—অথচ গ্যাটসবির কাছে তার ক্যাম্পের তাঁবুর মতো ডেইজির কাছে তা কেবল এক অতি সাধারণ নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার।
বাড়িটি অদ্ভুত রহস্যময়, ওপরতলার কিছু ঘর অন্য ঘরগুলোর চেয়ে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দর আর মোহময়, করিডোরে অসাধারণ, দীপ্তিময় ক্রিয়াকলাপ, সেখানে রোমান্সে কোনো মজে যাওয়া ল্যাভেন্ডারে আবৃত মৃয়মান গন্ধ ছিল না বরং ছিল বছরের চকচকে গাড়িগুলোর উচ্ছ্বসিত তাজা নিঃশ্বাস আর নৃত্যে সুরভিত ফুল, যারা কখনও শুকাবার সুযোগও পায় না। অগণিত পুরুষের ভালবাসার আরাধ্য ডেইজি—এই বোধ তাকে আরো আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল, তার চোখে সে ছিল অসাধারণ-অমূল্য৪। পুরো বাড়িতে সে অনুভব করছিল সেই সব পুরুষের উপস্থিতি আর তাদের ছায়া, বিস্তৃত বাতাসে শুনেছিল তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রাণবন্ত গভীর আবেগের প্রতিধ্বনি।
তবে সে জেনে গিয়েছিল ডেইজির বাড়িতে তার আগমন এক সুন্দর সর্বনাশের অশনি সংকেত। ভবিষ্যত জে গ্যাটসবি যতই মহিমান্বিত হোক না কেন, সেই ইপ্সিত ক্ষণে কেবল সে এক অতীতহীন কপর্দকশূন্য নিঃস্ব যুবক, যে কোনও মুহূর্তে যার ইউনিফর্মের অদৃশ্য পোশাকটিও কাঁধ থেকে পিছলে যেতে পারে। তাই সে তার সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছিল। নিজেকে তার সামনে যোগ্য করতে যা সম্ভব তাই করেছিল—যেভাবে যা পেয়েছে তা নিয়েছে, বেপরোয়াভাবে, এমন কি নীতিহীন অসাধু উপায়েও—অবশেষে এক অক্টোবরের রাতে সে ডেইজিকে নিয়ে যায়, নিয়ে যায় কারণ তার হাত দাবি করার প্রকৃত যোগ্যতা তার ছিল না।
অবশ্যই ডেইজিকে তার মিথ্যা ভানের মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য নিজেকে তার ঘৃণা করা উচিত ছিল। যদিও সে অলীক কোটি টাকার ছলচাতুরী করেনি, কিন্তু জেনে বুঝে ডেইজিকে এমন এক নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে; যে ডেইজি তাকে তার নিজের স্তরের একজন—যে তার ভার নিতে সম্পূর্ণ সক্ষম বলে বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু সে সামর্থ গ্যাটসবির ছিল না—তার জীবনকে আরামপ্রদ করার জন্য বর্মের মত পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো স্বচ্ছল পরিবারের ছায়া ছিল না এবং প্রকৃতপক্ষে সে ছিল দায়বদ্ধ, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে নৈর্ব্যক্তিক কর্তৃত্বের বিবেচনায় নিক্ষিপ্ত হতে।
তবুও সে নিজেকে ঘৃণা করেনি, কিন্তু যেমনটি ভেবেছিল তাও হয়নি। সে সম্ভবত, যা পায় তাই হাত পেতে নিতে চেয়েছিল—কিন্তু পরিশেষে নিজেকে আবিষ্কার করেছিল “গ্রেইলের”৫ অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ডেইজি দুষ্প্রাপ্য এ ব্যাপারে সে ছিল সন্দেহাতীত, কিন্তু একজন “ভালো” মেয়ে যে কতটা দুষ্প্রাপ্য হতে পারে সে ধারণা ছিল তার কল্পনারও বাইরে। ডেইজি হারিয়ে গিয়েছিল তার অট্টালিকায়, তার বিত্ত-বৈবভ-খচিত পরিপূর্ণ জীবনে, গ্যাটসবিকে—শূন্য হাতে ছেড়ে দিয়ে। অথচ সে ভেবেছিল তারা এক হয়ে গেছে, ব্যস্ এটুকুই।
দু’দিন পরে যখন আবার তাদের দেখা হয় তখন গ্যাটসবি ছিল শ্বাসরুদ্ধ, একরকম প্রতারিত। ক্রয় করা বিলাসী উজ্জ্বলতায় তারকা-খচিত ছিল ডেইজির বারান্দা; বেতের সোফাগুলো কেতাদুরস্ত কায়দায় মচমচ করে উঠেছিল যখন সে তার দিকে ঘুরে তাকায় আর গ্যাটসবি তার কৌতূহলী সুদৃশ্য মুখ চুম্বন করে। সাময়িক ঠাণ্ডায় ঈষৎ ভাঙা তার কণ্ঠস্বর তাকে করেছিল আরও মোহনীয়, বহু সতেজ পোশাকের ভীরে, নিরাপদ এবং গর্বিত,—দারিদ্র্যের উত্তপ্ত সংগ্রামকে মাড়িয়ে, তারুণ্য আর রহস্যকে দখল এবং সংরক্ষণ করা সম্পদে রূপার মতো জ্বলজ্বল করছিল ডেইজি—যা গ্যাটসবিকে করে তুলেছিল আরও বেশি সচেতন।
* * *
“আমি তোমাকে বর্ণনা করতে পারব না ওল্ড স্পোর্ট, আমি কতটা অবাক হয়েছিলাম যখন তার প্রেমে পড়লাম। আমার ধারণা ছিল সে আমাকে ছুড়ে ফেলবে, কিন্তু না, সে তা করেনি, সেও প্রেমে পড়েছিল। ভেবেছিল আমি জ্ঞানী একজন মানুষ কারণ আমার জানার বিষয়গুলো ছিল তার থেকে ভিন্ন... হ্যাঁ, আমি দূরে সরে যাচ্ছিলাম, আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে, প্রতিটি মুহূর্তে, তার প্রতি আমার প্রেমের গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ আর সব কিছু আমার কাছে ছিল গুরুত্বহীন। মনে হয়েছিল এতসব দুর্দান্ত অর্জনের পিছে ছুটে লাভ কী যদি আমি যা করতে যাচ্ছি, তাকে বলার জন্য আমি আরও ভাল সময় পেতে পারি?”
বিদেশে যাওয়ার আগের শেষ বিকেলে সে ডেইজিকে বুকে জড়িয়েছিল এক দীর্ঘ, নীরব সময়ে। শরতের ঠান্ডায় ঘরে প্রজ্বলিত আগুনের আভায় ঝলমল করছিল ডেইজির কপোল। কখনও সে তার কম্পিত শরীরের নড়াচড়া আর দেহভঙ্গিমার সঙ্গে হাত পরিবর্তন করে তার উজ্জ্বল কালো চুলে চুম্বন করছিল। সেই বিকেল যেন ক্ষণিকের জন্য তাদের শান্ত করেছিল, প্রতিশ্রুত পরবর্তী দীর্ঘ বিচ্ছেদে গভীর স্মৃতির প্রস্ততির মত। তন্দ্রাচ্ছন্নতায় ডেইজি তার কোটের কাঁধে নীরবে ঠোঁট ঘষছিল আর গ্যাটসবি ডেইজির আঙ্গুলের শেষ প্রান্ত স্পর্শ করেছিল, ভালবাসার সেই মাসে, সেই মুহূর্তের মত এত ঘনিষ্ঠ, একে অপরের প্রতি এত গভীর-একাত্ম কখনই তারা বোধ করেনি।
* * *
যুদ্ধে গ্যাটসবি ছিল দুর্দান্ত, অসাধারণ। ফ্রন্টে যাওয়ার আগে সে ছিল একজন ক্যাপ্টেন কিন্তু আর্গনের৬ যুদ্ধের পর সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং বিভাগীয় মেশিনগানের কমান্ড পায়। যুদ্ধের পর সে বাড়ি ফেরার চেষ্টায় অস্থির হয়ে ওঠে কিন্তু কিছু জটিলতা আর ভুল বোঝাবুঝি তাকে অক্সফোর্ডে পাঠায়। ডেইজির চিঠির স্নায়বিক হতাশা তাকে উতলা করে। সে উদ্বিগ্ন হয়—গ্যাটসবির অপরিহার্য কর্তব্যের বাধ্যতামূলক অক্ষমতা দেখতে পায়নি ডেইজি, চিহ্নিত করতে পারেনি সেই অন্তর্নিহিত কারণ। সে গ্যাটসবিকে দেখতে চেয়েছিল তার পাশে, বহির্বিশ্বের চাপ অনুভব করে সেই মুহূর্তে তার উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছিল, আশ্বস্ত হতে চেয়েছিল সর্বোপরি সে সঠিক কাজটি করছে।
তখন ডেইজির বয়স অল্প, তার কৃত্রিম জগত অর্কিড৭ সুরভিত এবং মনোরম, প্রফুল্ল, উন্নাসিক অভিজাত অর্কেস্ট্রায় আঁকা, যা দুঃখ আর জীবনের ইঙ্গিতকে অংকের সংক্ষিপ্তসারে বছরের নতুন সুর ও ছন্দে সাজায়। সারারাত স্যাক্সোফোনরা “বিয়েল স্ট্রিট ব্লুজ”-এর৮ নৈরাশ্যবাদী মন্তব্যে হাহাকার করে কাঁদে যখন শত জোড়া সোনালি-রূপালী চপ্পল চাকচিক্যময় জ্বলজ্বলে ধুলোকে এলোমেলো করে উড়ায়। চা-পানের ধূসর সময়ে হালকা মিষ্টি জ্বরের অবিরাম কাঁপুনির আমন্ত্রণ থাকলেও, তাজা মুখগুলো এখানে-সেখানে বিষণ্ন ভেঁপুতে উড়ানো গোলাপের পাপড়ির মত মেঝের চারপাশে ভেসে ওঠে।
মহাবিশ্বের সেই গোধূলিতে ডেইজি আবারও ঋতুচক্রের পরিক্রমায় এগিয়ে চলতে শুরু করে; আবারও হঠাৎ আধ-ডজন পুরুষের সঙ্গে প্রতিদিন আধ-ডজন অভিসারে যায় এবং ভোরবেলায় বিছানার পাশে মেঝেতে মৃত অর্কিডে জট পাকানো তার সান্ধ্যকালীন পোশাকের পুঁতি আর শিফন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তবুও তার বুকে প্রতি মুহূর্তে, কোনো এক অমীমাংসিত আবেগ রায়ের জন্য ডুকরে ডুকরে কাঁদে। জীবনের তাৎক্ষণিক রূপান্তরের জন্য সে হয়ে ওঠে তৎপর—সে চায় একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হোক যে কোনো শক্তিতে—প্রেমের, অর্থের, নতুবা কোন সন্দেহাতীত বাস্তবতার—যা তার হাতের কাছেই ছিল।
বসন্তের মাঝামাঝি টম ব্যুকাননের আগমন সেই শক্তির রূপ নেয়। তার ব্যক্তিত্ব, পদ মর্যাদা আর তার অবস্থান নিয়ে আসে এক সুস্থ নিশ্চয়তা যা তাকে আকৃষ্ট করে। সেখানে নিঃসন্দেহে বিরাজমান ছিল নির্দিষ্ট সংগ্রামের সঙ্গে এক নির্দিষ্ট স্বস্তি। অক্সফোর্ড থাকাকালেই চিঠিটি গ্যাটসবির কাছে পৌঁছে যায়।
* * *
লং আইল্যান্ডে তখন ভোর, আমরা নীচতলার বাকি জানালাগুলো খুলে দিই, ধূসর সোনালী আলোয় ঘরটি ভরে যায়। শিশির জুড়ে বিক্ষিপ্ত গাছের ছায়া, নীল পাতার মাঝে ভুতুড়ে পাখিদের গান। ধীর মনোরম আন্দোলন, মৃদুমন্থর বাতাসে, শীতল সুন্দর এক দিনের প্রতিশ্রুতি।
“আমার মনে হয় না সে তাকে কখনো ভালোবেসেছে।” গ্যাটসবি জানালা থেকে ঘুরে আমার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। “তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, ওল্ড স্পোর্ট, আজ বিকেলে সে কত উত্তেজিত ছিল। আমার বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলতে টম তাকে এতকিছু বলেছে যে সে ভয় পেয়েছে—তার মনে হয়েছে আমি কোনো সস্তা ধারালো ফলা এবং ফলশ্রুতিতে সে কি বলেছে তা সে নিজেই জানে না।”
দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে বসে পড়ে সে।
“অবশ্য সে তাকে ভালোবাসতেও পারে, এক মুহূর্তের জন্য, তাদের বিয়ের প্রথম দিকে—কিন্তু তখনও সে আমাকে ততোধিক ভালবেসেছে, তুমি কি বুঝতে পারছ?”
হঠাৎ একটি কৌতূহলোদ্দীপক মন্তব্য করে সে:
“যাই হোক না কেন,” সে বলে, “বিষয়টি একেবারেই তার ব্যক্তিগত।”
এই মন্তব্য থেকে কেউ কী পেতে পারে, শুধুমাত্র তাদের অপরিমেয় প্রণয়ঘটিত ব্যাপারের তীব্রতার অনুমান ছাড়া?
সে যখন ফ্রান্স থেকে ফিরেছিল টম এবং ডেইজি তখনও তাদের বিবাহ-সফরে, আর গ্যাটসবি তার সেনাবাহিনীর শেষ বেতনে লুভলে এক অপ্রতিরোধ্য দুর্বিষহ যাত্রা করে। এক সপ্তাহ সে ছিল সেখানে, সেই রাস্তায় হেঁটে বেড়িয়েছিল নভেম্বরের রাতে যেখানে তাদের পা একত্রিত হয়েছিল এবং তার সাদা গাড়িতে যে রাস্তায় তারা নাম-না-জানা জায়গাগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছিল। ঠিক যেমন ডেইজির বাড়িটি সবসময় তার কাছে ছিল অন্যান্য সব বাড়ির চেয়ে রহস্যময় আর আলাদা, তার অনুপস্থিতিতে সেই শহরটিও তার কাছে, তখন এক বিষণ্ন সৌন্দর্যে ছেয়ে গিয়েছিল।
সে চলে গিয়েছিল তাকে পিছনে ফেলে—এই অনুভব নিয়ে যে—যদি সে আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করত, হয়ত তাকে খুঁজে পেত। দিনের কোচে—সে ছিল নিঃস্ব-উষ্ণ। খোলা ভেস্টিবুলের কাছে গিয়ে একটি ভাঁজ-করা চেয়ারে বসেছিল সে, স্টেশনটি দূরে সরে যাচ্ছিল, অপরিচিত ভবনগুলো পিছনে সরে যাচ্ছিল। সেখানে দূরে বসন্তের মাঠে, চিরাচরিত দৈনন্দিন এক রাস্তায় একটি হলুদ ট্রলি, যে কোনোদিন তার যাত্রীদের নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য তাদের সঙ্গে কিছু পথ পারি দিয়েছিল, যারা তার ফর্সা মুখের জাদুর সাক্ষী।
বাঁকা ট্র্যাকটি সূর্য থেকে, দূর থেকে দূরে, নীচে ডুবে যেতেই সেই বিলুপ্ত শহরের উপরে আশীর্বাদের মত ছড়িয়ে পড়ে, যে শহরে ডেইজি কখনো নিঃশ্বাস নিত। মরিয়া হয়ে হাত প্রসারিত করে সে, শুধুমাত্র বাতাস থেকে সেই থোকাটুকু ছিনিয়ে নিতে, তার অবস্থানের সেই খন্ডটুকুকে বাঁচাতে, সময়ের যে গুচ্ছ ডেইজি তার জন্য মনোরম করে তুলেছিল। কিন্তু এখন তার ঝাপসা চোখের জন্য সবকিছু খুব দ্রুত ছুটে গেছে, সে জেনে গিয়েছে তার জীবনের সর্বাধিক জীবন্ত, সবচেয়ে সতেজ, সবচেয়ে সেরা, সেই অসাধারণ অংশটিকে সে হারিয়ে ফেলেছে, চিরতরে।
* * *
সকাল নয়টা, প্রাতরাশ শেষে আমরা বারান্দায় বেরোই। রাতারাতি আবহাওয়ায় এসেছে এক তীক্ষ্ণ পরিবর্তন, বাতাসে শরতের গন্ধ। মালিটি, গ্যাটসবির প্রাক্তন চাকরদের মধ্যে শেষ একজন, সিঁড়ির প্রান্তে এসে দাঁড়ায়।
“আজ আমি পুলটি নিগড়ে ফেলব, মিস্টার গ্যাটসবি। খুব শীঘ্রই পাতা ঝরতে শুরু করবে এবং তারপরে পাইপগুলোর সবসময় সমস্যা হয়।”
“আজ থাকুক,” গ্যাটসবির নির্দেশ। সে আমার দিকে ক্ষমাপ্রার্থীসুলভ-ভঙ্গিতে ঘুরে আসে। “জানো, ওল্ড স্পোর্ট, আমি পুলটি সারা গ্রীষ্মে একবারও ব্যবহার করিনি?”
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াই।
“আমার ট্রেনের মাত্র বারো মিনিট বাকী।”
আমি শহরে যেতে চাইনি। কাজ করার ন্যূনতম শালীন অবস্থায় আমি তখন ছিলাম না কিন্তু এ ছিল তার চেয়েও বেশি—আমি গ্যাটসবিকে ছেড়ে যেতে চাইনি। আমি সেই ট্রেনটি মিস করেছি এবং তারপরে আরেকটি, নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারার আগেই।
“আমি ফোন করব,” আমি অবশেষে বললাম।
“করো, ওল্ড স্পোর্ট।”
“আমি তোমাকে দুপুরে ফোন করব।”
আমরা ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকি।
“মনে হয় ডেইজিও ফোন করবে।” সে উদ্বিগ্নভাবে আমার দিকে তাকায়, যদি আমি তার সঙ্গে একমত হয়ে নিশ্চিত করি সেই আশায়।
“আমারও তাই মনে হচ্ছে।”
“আচ্ছা-বিদায়।”
আমরা হাত মেলাই, তারপর আমি ধীরপায়ে হাঁটতে থাকি। ঝোঁপের কাছাকাছি পৌঁছানোর ঠিক আগে কিছু একটা মনে পড়তেই আমি ঘুরে দাঁড়াই। লন কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলি:
“ওরা বিকৃত ঘৃণ্য একটা জুটি। সেই সব জঘন্য দলের চাইতে তুমি অনেক অনেক বেশি মূল্যবান।”
আমি সবসময় সুখী এবং গর্ববোধ করি যে আমি তাকে অন্তত এটুকু বলতে পেরেছিলাম। এটিই ছিল তার প্রতি আমার একমাত্র প্রশংসাবাণী, পরিবর্তে যে আমি তাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অস্বীকার করে গেছি। প্রথমে নম্রভাবে মাথা নেড়েছিল সে, তারপর তার মুখটি এক উজ্জ্বল সম্মতিসূচক হাসিতে ভরে ওঠে, যেন আমরা দুজন সবসময় সেই সত্যের সঙ্গে ঐক্যমতে আনন্দিত। তার স্যুটের টকটকে গোলাপী কাপড় সিঁড়ির সাদা ধাপগুলোতে রঙের একটি উজ্জ্বল বলয় তৈরি করেছিল আর আমি ভাবছিলাম তিন মাস আগের সেই রাতের কথা যখন আমি তার পৈতৃক ভিলায় প্রথম আসি। লন এবং ড্রাইভে ছিল সেই মুখগুলোর ভিড় যারা তার দুর্নীতির অনুমান করেছিল—এবং সে দাঁড়িয়েছিল, সিঁড়ির ঠিক এই ধাপগুলোতেই, তার অক্ষয় স্বপ্নকে আড়াল করে, তাদের বিদায় জানাতে।
আমিও সেদিন আতিথেয়তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম, আমরা সবাই, সবসময় তাকে সেজন্যই ধন্যবাদ জানাতাম—আমি এবং অন্য সবাই।
“বিদায়,” আমি আবারও চিৎকার করি। “আমি প্রাতরাশ উপভোগ করেছি, গ্যাটসবি।”
* * *
শহরে পৌঁছে কিছুক্ষণ অন্তহীন পরিমাণ স্টকের উদ্ধৃতিগুলোর তালিকা তৈরির চেষ্টার পর আমি সুইভেল-চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়ি। দুপুরের ঠিক আগে একটি ফোন আমাকে জাগিয়ে কপালে ঘাম ঝরাতে শুরু করে। ফোনটা ছিল জর্ডান বেকারের; সে প্রায়ই এই সময়ে আমাকে ফোন করত, কারণ হোটেল, ক্লাব এবং তার নিজের বাড়ির মধ্যে চলাফেরার অনিশ্চয়তা তাকে অন্য কোনও উপায়ে খুঁজে পেতে কঠিন করে তুলেছিল। সবুজ গল্ফ লিঙ্ক থেকে পাল তোলা ডিভোটের মতো তার সদা সতেজ-শীতল কণ্ঠস্বর তারে ভেসে এসে অফিসের জানালায় বসত, অথচ সেই সকালে সেই কণ্ঠ কঠোর এবং শুষ্ক মনে হল।
“আমি ডেইজির বাড়ি থেকে চলে এসেছি,” সে বলল। “আমি এখন হেম্পস্টেডে৯ এবং আজ বিকেলে সাউদাম্পটনে১০ যাব।”
ডেইজির বাড়ি ছাড়ার তার এই সম্ভাব্য কৌশল আমাকে বিরক্ত করে তুলেছিল এবং পরবর্তী মন্তব্যটি আমাকে আরো কঠোর করে তোলে।
“গত রাতে তুমি আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করনি।”
“সে পরিস্থিতিতে আর কেমন হতে পারত?” এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর—“তবে আমি তোমাকে দেখতে চাই।”
“আমিও তোমাকে দেখতে চাই। ধর আমি যদি সাউদাম্পটনে না যাই? আজ বিকেলে শহরে আসি?”
“না—আজ বিকেলে সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।”
“আচ্ছা! খুব ভাল।”
“আজ বিকেলে অসম্ভব। বিভিন্ন—”
আমরা এভাবেই কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম তারপর হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। জানি না, তীক্ষ্ণ ঝংকারে আমাদের মধ্যে কে ফোন কেটেছিল, তবে আমি জানি আমি গুরুত্ব দিইনি। যদি এই পৃথিবীতে আর কখনও; এমন কি আর কোনোদিনও; তার সঙ্গে আমার আর কথা নাও হতো তবুও আমি সেদিন চায়ের টেবিলে তার সঙ্গে দেখা করতে যেতাম না।
কয়েক মিনিট পরে আমি গ্যাটসবির বাড়িতে ফোন করি, কিন্তু লাইনটি ব্যস্ত পাই। আমি চারবার চেষ্টা করি; অবশেষে কেন্দ্রীয় একজন আমাকে উত্তেজিতভাবে জানায় যে ডেট্রয়েট থেকে লং ডিসটেন্সের জন্য তারটি খোলা রাখা হয়েছে। আমি টাইম-টেবিল বের করে তিনটা পঞ্চাশের ট্রেনের চারপাশে একটা ছোট বৃত্ত আঁকি। তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবতে চেষ্টা করি। তখন সবে দুপুর।
* * *
সেদিন সকালে যখন ট্রেনে ছাইয়ের স্তূপ অতিক্রম করছিলাম, ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ির অপর প্রান্তে চলে গিয়েছিলাম। আমার ধারণা হয়ত সেখানে সারাদিন ধরে একটা কৌতুহলী ভিড় থেকে থাকবে, যেখানে ছোট ছোট ছেলেরা ধুলোর মধ্যে অন্ধকার দাগ খুঁজছিল আর কোনো বাচাল বৃদ্ধ বারবার ঘটনাটি বিবৃত করছিল, যতক্ষণ না গল্পটি ক্রমান্বয়ে অবাস্তব হয়ে ওঠে এমন কি তার নিজের কাছেও; যে গল্পটি আর বলার থাকে না এবং মার্টেল উইলসনের দুঃখজনক অর্জনও বিস্মৃতিতে তলিয়ে যায়।
এখন আমি একটু পেছনে ফিরে যেতে চাই এবং বলতে চাই আগের রাতে আমরা সেখানে যাওয়ার পর থেকে গ্যারেজে কী হয়েছিল।
বোন ক্যাথরিনকে খুঁজে পেতে তাদের অসুবিধা হয়। সে অবশ্য সেই রাতে মদ্যপানের নিয়ম ভঙ্গ করেছিল কারণ সে যখন সেখানে পৌঁছায় তখন সে ছিল বদ্ধ মাতাল এবং বুঝতে পারেনি যে অ্যাম্বুলেন্সটি ইতিমধ্যেই ফ্লাশিংয়ে চলে গেছে। যখন তারা তাকে বিষয়টি বোঝাতে সমর্থ হয়, সে অবিলম্বে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেন এটি প্রণয়ঘটিত সম্পর্কের অসহনীয় অংশ। এক কৌতুহলী লোক তাকে তার গাড়িতে তুলে নিয়ে তার বোনের অন্তিম সংস্কারস্থলে পৌঁছে দেয়।
মধ্যরাতের অনেক পর অবধি একটি পরিবর্তিত উৎসুক জনতার ভিড় গ্যারেজের সামনে বিরাজমান ছিল এবং ভিতরে জর্জ উইলসন সোফায় আগে পিছে দুলছিল। কিছুক্ষণের জন্য অফিসের দরজাটি খুলে যেতেই গ্যারেজে আসা প্রত্যেকের অপ্রতিরোধ্য চোখ অভ্যন্তরের দিকে হামলা করে। অবশেষে ভেতর থেকে কেউ একজন একে লজ্জাজনক বলে ধিক্কার দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। মিকেলিসসহ আরও কয়েকজন তার সঙ্গে ছিল—প্রথমে চার বা পাঁচজন, পরে দুই বা তিনজন। এরও পরে মিকেলিস শেষ আগন্তুককে সেখানে পনেরো মিনিটের জন্য অপেক্ষা করতে বলে নিজের বাসায় ফিরে এক পাত্র কফি তৈরি করে। তারপর ফিরে এসে ভোর পর্যন্ত সে একাই উইলসনের সঙ্গে থেকে যায়।
আনুমানিক তিনটে নাগাদ উইলসনের অসংলগ্ন প্রলাপ বদলে যায়—সে শান্ত হয়ে আসে এবং হলুদ গাড়িটি নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। সে ঘোষণা দেয় যে সেই হলুদ গাড়িটির মালিককে খুঁজে বের করার উপায় তার কাছে আছে, এবং প্রকাশ করে যে কয়েক মাস আগে তার স্ত্রী শহর থেকে থেঁতলানো মুখ আর ফোলা নাক নিয়ে ঘরে ফিরেছিল।
নিজের কথায় সে নিজেই শিউরে উঠেছিল এবং “ও আমার ঈশ্বর” বলে আবারও ভাঙা স্বরে কাঁদতে শুরু করে। তাকে বিক্ষিপ্ত করতে মিকেলিস কথা ঘুরাবার একটি আনাড়ি পদক্ষেপ নেয়।
“কতদিন হলো তোমাদের বিয়ে হয়েছে, জর্জ? এখানে আসো, চেষ্টা করো, এক মিনিট শান্ত হয়ে বসে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। তোমাদের বিয়ের কতদিন হলো?”
“বারো বছর।”
“কোনও সন্তান? এসো, জর্জ, চুপচাপ বসো—আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছি। তোমাদের কি কখনো কোনো সন্তান আছে?”
নিস্তেজ আলোয় শক্ত বাদামি বিটলগুলোর১১ অবিরাম গর্জন থেমে থাকে না এবং যখনই কোন গাড়ি বাইরে রাস্তাকে ছিঁড়ে চলে যায় তখনই মিকেলিসের মনে হয় গাড়িটি বুঝি সেই গাড়ি, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে যেটি থামেনি। গ্যারেজের ভেতরটি তার জন্য ছিল সহ্যাতীত; কাজের টেবিলে যেখানে তার দেহটি পড়েছিল সেখানে তখনো রক্তের দাগ মেলায়নি, সে অস্বস্তি নিয়ে অফিসের চারপাশে পায়চারী করে—সকালের আগ পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় ছিল তার অবগত—এবং সময়ে সময়ে সে উইলসনের পাশে বসে তাকে আরো একটু শান্ত রাখার চেষ্টা করে।
“এমন কোনো গির্জা কি আছে জর্জ, যেখানে তুমি মাঝে মাঝে যাও? অনেকদিন সেখানে যাওনি এমনও যদি হয়? হয়তো আমি গির্জায় কথা বলে পুরোহিতকে ডাকতে পারি এবং যাজক এসে তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারে, দেখো?”
“আমি কোনও গির্জার অন্তর্ভুক্ত নই।”
“তোমার একটি গির্জা থাকা উচিত, জর্জ, এরকম সময়ের জন্য হলেও। তুমি অবশ্যই কখনও না কখনও গির্জায় গিয়েছ। তোমরা কি গির্জায় বিয়ে করনি? শোন, জর্জ, আমার কথা শোন। তুমি কি গির্জায় বিয়ে করনি?”
“সে অনেক আগের কথা।”
উত্তর দেওয়ার প্রচেষ্টায় তার দোলনার ছন্দ ভেঙে যায়—মুহূর্তের জন্য সে চুপ করে থাকে। তারপর আবারও সেই একই অর্ধ-চেতন, অর্ধ-বিহ্বল দৃষ্টি ফিরে আসে তার বিবর্ণ চোখে।
“ওখানে ড্রয়ারে দেখো,” ডেস্কের দিকে ইশারা করে সে।
“কোন ড্রয়ার?”
“ঐ ড্রয়ার-ওইটা।”
মিকেলিস তার হাতের কাছের ড্রয়ারটা খোলে। সেখানে ছোট চামড়া আর রুপার বিনুনি করা একটা দামি কুকুরের শিকল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। জিনিসটা দেখে মনে হয়েছিল নতুন।
“এটা?” সেটিকে ধরে সে জিজ্ঞাস করল।
উইলসন মাথা নাড়ে।
“গতকাল বিকেলে আমি এটি পেয়েছি। সে আমাকে এর সম্পর্কে বলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমি জানতাম এর মধ্যে একটা কিন্তু আছে।”
“মানে এটা তোমার স্ত্রী কিনেছিল?”
“সে এটিকে তার আলমারিতে টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে রেখেছিল।”
মিকেলিস এতে আজব কিছু দেখতে পায়নি বরং সে তার স্ত্রীর কুকুরের শিকল কেনার সপক্ষে হাজার যুক্তি উপস্থাপন করে। ধারণা করা যায় উইলসন এর আগেও মার্টলের কাছ থেকে এই একই ধরনের ব্যাখ্যার কিছু শুনেছিল, কারণ তার সান্ত্বনাদাতা বাতাসে যতই ব্যাখ্যা ছুড়ছিল—ততই সে ফিসফিস করে বলতে শুরু করেছিল—“ওহ, আমার ঈশ্বর!”
“তারপর সে তাকে হত্যা করেছে,” উইলসন বলে। হঠাৎ তার মুখ খুলে ঝুলে যায়।
“কে?”
“খুঁজে বের করার উপায় আমার কাছে আছে।”
“তুমি অসুস্থ, জর্জ,” বন্ধুটি বলে। “বিষয়টি তোমার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং তুমি কী বলছ তুমি নিজেই জান না। তোমার অন্তত সকাল পর্যন্ত চুপচাপ বসে থাকার চেষ্টা করা উচিত।”
“সে তাকে খুন করেছে।”
“এটা একটা দুর্ঘটনা, জর্জ।”
উইলসন মাথা নাড়ে। তার চোখ সরু এবং মুখ উচ্চকিত ভৌতিক “হুম!”-এর সঙ্গে কিছুটা প্রশস্ত হয়।
“আমি জানি,” আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে সে, “বন্ধু হিসাবে আমি বিশ্বস্ত এবং আমার জন্য কারও কোনও ক্ষতি হোক তা আমি কখনই চাই না, তবে যখন আমি কিছু আঁচ করতে পারি তখন আমি জানি তাতে কোন ভুল নেই। সেই গাড়ির লোকটিই ছিল। সে তার সঙ্গে কথা বলতে দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল কিন্তু সে থামেনি।”
মিকেলিসও ব্যাপারটি দেখেছিল তবে তাতে কোনো বিশেষ তাৎপর্য আছে বলে তার মনে হয়নি। তার বিশ্বাস মিসেস উইলসন বিশেষ কোনো গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেনি, সে কেবল তার স্বামীর কাছ থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল।
“সে কীভাবে এমন হতে পারে?”
“সে অনেক গভীর,” উইলসন বলে, যেন সে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। “আহ-হ-হ—”
আবার দুলতে শুরু করে সে এবং মিকেলিস তার হাতে শিকলটি মোচড়াতে মোচড়াতে দাঁড়িয়ে থাকে।
“তোমার কি কোনো বন্ধু আছে যাদের আমি টেলিফোন করতে পারি, জর্জ?”
এ ছিল এক অসহায় আশা—সে প্রায় নিশ্চিত যে উইলসনের কোন বন্ধু নেই: তার স্ত্রীর জন্য সে যথেষ্ট ছিল না। তবু খানিক পরে ঘরে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করে সে খুশি হয়, তরিৎগতিতে জানালা দিয়ে ভোরের বার্তা নিয়ে ভেসে আসে নীলাভা, সে অনুভব করে যে ভোর খুব বেশি দূরে নয়।
আনুমানিক পাঁচটা নাগাদ আলো নিভানোর জন্য বাইরেটা যথেষ্ট নীল হয়ে আসে। উইলসনের ঢুলুঢুলু চোখ ছাই-পাহাড়ের উপরে ঘুরে যায়, যেখানে ছোট ছোট ধূসর মেঘেরা চমৎকার আকৃতিতে ভোরের ক্ষীণ বাতাসে এখানে-সেখানে ছুটছে।
“আমি তাকে বলেছিলাম,” সে বিড়বিড় করে বলে, দীর্ঘ নীরবতার পরে। “আমি তাকে বলেছিলাম, আমাকে সে বোকা বানাতে পারে কিন্তু ঈশ্বরকে বোকা বানাতে পারে না। তাকে আমি জানালার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম—” খানিকটা চেষ্টা করে উঠে সে পিছনের জানালার কাছে যায় এবং জানালায় তার মুখ চেপে ধরে, “—এবং বলেছিলাম, “তুমি যা কিছু করছ সবকিছুই ঈশ্বর জানেন। তুমি আমাকে বোকা বানাতে পার কিন্তু ঈশ্বরকে বোকা বানাতে পার না!”
পিছনে দাঁড়িয়ে মিকেলিস অবাক হয়ে দেখে সে ডাক্তার টি জে একেলবার্গের চোখের১২ দিকে তাকিয়ে, সবেমাত্র যারা দ্রবীভূত রাত থেকে ফ্যাকাশে এবং বিশাল হয়ে জেগে উঠেছে।
“ঈশ্বর সব দেখতে পায়,” উইলসন পুনরাবৃত্তি করে।
“এ তো কেবল একটি বিজ্ঞাপন,” মিকেলিস আশ্বস্ত করে। কিছু একটা তাকে জানালা থেকে মুখ সরিয়ে ঘরের দিকে মুখ ফেরাতে বাধ্য করে। কিন্তু উইলসন সেখানে দাঁড়িয়েই থাকে—জানালায় মুখ এলিয়ে, উষালগ্ন ছুঁয়ে।
* * *
ছয়টার দিকে ক্লান্ত মিকেলিস বাইরে একটি গাড়ি থামার শব্দে কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে। গত রাতের পাহারাদারদের একজন ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সে তিনজনের জন্য প্রাতরাশ তৈরি করে আনে, যা তারা সবাই মিলে খায়। উইলসন তখন শান্ত, ক্লান্ত মিকেলিস খানিকটা ঘুমাতে বাড়িতে যায়; চার ঘণ্টা পরে জেগে উঠে যখন সে গ্যারেজে ফিরে আসে ততক্ষণে উইলসন চলে গেছে।
তার চলাফেরা—পুরোটা সময় সে পায়ে হেঁটেছিল—পরে পোর্ট রুজভেল্ট এবং তারপর গ্যাডস হিলে তার চিহ্ন পাওয়া যায় যেখানে সে একটি স্যান্ডউইচ কিনেছিল যা সে খায়নি, তার সঙ্গে এক কাপ কফি। অবশ্যই সে ক্লান্ত ছিল, ধীরে হেঁটেছে, কারণ সে দুপুর পর্যন্ত গ্যাডস হিলে পৌঁছাতে পারেনি। এখান পর্যন্ত তার সময়ের হিসাব মেলাতে কোনো অসুবিধা হয়নি—কিছু ছেলে একজন মানুষকে “পাগলের মতো আচরণ করতে” দেখেছিল যে গাড়িচালকদের রাস্তার পাশ থেকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখছিল। তারপর তিন ঘণ্টার জন্য সে দৃশ্য থেকে গায়েব হয়ে যায়। পুলিশের ধারণা, মিকেলিসকে সে যে শক্তির কথা বলেছে, যে তার “আবিষ্কার করার একটি উপায় আছে,” সম্ভবত এই যে, সে এই সময়টিতে একটি হলুদ গাড়ির খোঁজে এক গ্যারেজ থেকে আরেক গ্যারেজে ঘুরে বেরিয়েছে। অন্যদিকে তাকে চেনে এমন কোনো গ্যারেজম্যানই এগিয়ে আসেনি—এবং সম্ভবত সে যা জানতে চায় তা খুঁজে বের করার তার একটি সহজ নিশ্চিত উপায় ছিল। আড়াইটা নাগাদ সে ওয়েস্ট এগে পৌঁছে একজনকে গ্যাটসবির বাড়ির পথ জিজ্ঞাসা করেছিল। তার মানে ততক্ষণে সে গ্যাটসবির নাম জেনে গেছে।
* * *
দুইটার দিকে গ্যাটসবি স্নানের পোষাকে বাটলারকে বলে যদি কেউ ফোন করে তবে যেন পুলে তার কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। বাতাসের গদিটি, যা পুরো গ্রীষ্মে তার অতিথিদের আমোদিত করেছিল, তুলতে সে গ্যারেজে যায়, গাড়ি-চালক সেটি পাম্প করতে তাকে সাহায্য করে। সে চালককে নির্দেশ দেয়—খোলা গাড়িটি কোনও পরিস্থিতিতেই যেন বাড়ির বাইরে নেওয়া না হয়—যদিও বিষয়টি অদ্ভুত, কারণ গাড়ির সামনের ডান ফেন্ডারটি মেরামত করা দরকার। গদিটি কাঁধে নিয়ে গ্যাটসবি পুলের দিকে রওনা হয়। পথে একবার থেমে সেটিকে কিছুটা স্থানান্তর করে, চালকটি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল তার সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা, কিন্তু সে মাথা নেড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই হলুদ গাছেগুলোতে অদৃশ্য হয়ে যায়।
কোন টেলিফোন আসে না কিন্তু বাটলার টেলিফোন-বার্তার অপেক্ষায় চারটা পর্যন্ত নির্ঘুম কাটায়—যতক্ষণ না সম্ভাব্য বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার মত অন্য কেউ এসে পৌঁছায়। আমার ধারণা গ্যাটসবি নিজেও বিশ্বাস করেনি আসবে এবং সম্ভবত আর গুরুত্বও দেয়নি। সত্যিই যদি তাই হয়ে থাকে তবে সে অবশ্যই অনুভব করেছিল তার পুরানো উষ্ণ পৃথিবীকে সে হারিয়ে ফেলেছে, এবং একটি একক স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার চরম মূল্য পরিশোধ করেছে। ভীরু পাতার আড়ালে অপরিচিত আকাশের দিকে তাকিয়ে সে নিশ্চয়ই শিউরে উঠেছিল... যে একটি গোলাপ কত অদ্ভুত; দুর্লভ ঘাসে সূর্যের আলো কতটা কাঁচা। একটি নতুন পৃথিবী, অবাস্তব বাস্তবতা, যেখানে দরিদ্র আত্মার স্বপ্ন বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো, অকস্মাৎ ভেসে আসে তার দিকে... নিরাকার গাছ থেকে গড়িয়ে, ছাইয়ের সেই বিস্ময়কর অশরীরী আকৃতিগুলোর মতো।
গাড়ি-চালক উলফশিয়ামের আশ্রিতদের একজন—গুলির শব্দ শুনেছিল—পরে সে কেবল এটুকুই বলে যে সেটা সম্পর্কে সে বেশি কিছু ভাবেনি। আমিও স্টেশন থেকে সরাসরি গ্যাটসবির বাড়িতে আসি, সিঁড়ির সামনের ধাপে আমার উদ্বিগ্ন পায়ে ছুটে আসাই প্রথম যে কাউকে সে বিষয়ে শঙ্কিত করেছিল। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তারা জানত। বিনা বাক্য ব্যয়ে, আমরা চারজন, চালক, বাটলার, মালী এবং আমি, তাড়াতাড়ি পুকুরে নামি।
সেখানে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সতেজ প্রবাহের ড্রেনমুখি জলের একটি ক্ষীণ ধারা, ছিল ন্যূনতম উপলব্ধিযোগ্য এক আলোড়ন—মৃদু তরঙ্গে যেগুলোকে ঢেউ তো নয়ই, এমন কি ঢেউয়ের ছায়াও বলা যাবে না। ভারাক্রান্ত গদিটি এলোমেলোভাবে পুলের নিচে ডুবে যাচ্ছিল। একটি ছোট দমকা বাতাস যা উপরিভাগে ছোট ছোট তরঙ্গে ঢেউখেলানো রূপ দিয়েছিল, এই দুর্ঘটনার ভারকে, এই দুর্ঘটনার আকস্মিক গতিপথকে ধুরিয়ে দিতে ছিল যথেষ্ট। স্পর্শের মত কিছু পাতার গুচ্ছ, কম্পাসের পায়ের মতো, জলের গভীরে একটি পাতলা লাল বৃত্তকে কেন্দ্র করে ধীরেধীরে পাক খাচ্ছিল।
আমরা গ্যাটসবিকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হতেই কিছুটা দূরে ঘাসের আলিঙ্গনে উইলসনের মৃতদেহ আবিষ্কার করে মালী; হত্যাকাণ্ডের হলোকাস্টটি১৩ এভাবেই পূর্ণতা পায়।
* * *
টীকা
১. হিউমিডর (humidor)–একটি আর্দ্রতা-নিয়ন্ত্রিত বাক্স যা প্রাথমিকভাবে সিগার, সিগারেট, গাঁজা বা পাইপ তামাক সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
২. শিকার–তার দীর্ঘ গোপন অযৌক্তিক ব্যয়সাপেক্ষ প্রচেষ্টার সর্বাধিক ব্যয়বহুল শিকার সে নিজেই।
৩. ক্যাম্প টেলর (camp taylor)–মার্কিন সেনাবাহিনী ১৯১৭ সালের শেষের দিকে ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চকে অগ্রগামী করার জন্য চারটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প মনোনীত করে এবং ক্যাম্প টেলর তাদের মধ্যে একটি ছিল। স্বয়ং ফিটজেরাল্ড ১৯১৭ সালে ক্যাম্প টেলরে ছিলেন।
৪. অসাধারণ-অমূল্য–মূল্যবান পণ্য হিসাবে ডেইজির প্রতি গ্যাটসবির আগ্রহকে ফ্রেম করে। প্রাথমিকভাবে গ্যাটসবির উদ্দেশ্য ছিল নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা, ডেইজিকে সে একটি পণ্য হিসাবে সেই উদ্দেশ্য চরিথার্ত করার জন্য পেতে চেয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সে তার সঙ্গে গভীর প্রণয়ে আবদ্ধ হয় এবং হয়ে ওঠে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
৫. গ্রেইল (Grail)–এখানে ‘হলি গ্রেইল’/‘হলি চ্যালিসের’ প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে । খ্রিস্টান ঐতিহ্য অনুসারে, হোলি চ্যালিস সেই পেয়ালা যেখান থেকে যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে লাস্ট সাপারের সময় ওয়াইন পান করেছিলেন। হলি গ্রেইল আর্থারিয়ান সাহিত্যে একটি অধরা অন্বেষণ বস্তু যা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধি দ্বারা অর্জনযোগ্য। নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে গ্যাটসবিও “নিজেকে একটি গ্রাইলের অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিল,” যার পরিণতি ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রিস্টের মতোই ছিল ভয়াবহ।
৬. আর্গোন (The Meuse-Argonne Offensive)–মিউস-আর্গোন অফেনসিভ (সেপ্টেম্বর ২৬-নভেম্বর ১১, ১৯১৮) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চূড়ান্ত সামরিক অভিযানগুলোর মধ্যে একটি। ১ মিলিয়নেরও বেশি আমেরিকান সৈন্য যুদ্ধ করেছিল এবং প্রায় ২৬,০০০ জন মারা গিয়েছিল, যা আমেরিকার ইতিহাসে দ্বিতীয় মারাত্মক সামরিক অভিযান। ৪৭ দিন পর, এই যুদ্ধ ১১ নভেম্বর ১৯১৮-এর আর্মিস্টিস স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল, যা মিত্রশক্তি এবং জার্মানির মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটায়। গ্যাটসবি অধ্যায়-৪-এ আর্গোনে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছে।
৭. অর্কিড (Orchid)–পুরো উপন্যাসে অর্কিড বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত, বিলাসিতা বা প্রতিপত্তির চিত্রের সঙ্গে সংযুক্ত “কৃত্রিম,” উচ্চশ্রেণীর জগতের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। গ্যাটসবির জমকালো পার্টিতে, চলচিত্রের তারকা, ডেইজির বিছানার পাশে মৃত অর্কিড বিভিন্নভাবে সম্পদ এবং অবক্ষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
৮. বিয়েল স্ট্রিট ব্লুজ (The Beale Street Blues)–“বিয়েল স্ট্রিট ব্লুজ” আমেরিকান সুরকার এবং গীতিকার ডব্লিউ. সি. হ্যান্ডির একটি ব্লুজ গান।
৯. হেম্পস্টেড (Hempstead)–হেম্পস্টেড নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টির তিনটি শহরের মধ্যে বৃহত্তম শহর।
১০. সাউদাম্পটন (Southampton)–সাউদাম্পটন নিউ ইয়র্কের দক্ষিণ-পূর্ব সাফোক কাউন্টির একটি বিলাসবহুল সাবার্বান শহর।
১১. বিটল (hard brown beetle)–এক ধরনের পোকা।
১২. টি জে একেলবার্গের চোখ–ছাই উপত্যকা জুড়ে তাকিয়ে থাকা ডাক্তার টি. জে. একেলবার্গের অস্থির বিবর্ণ বিলবোর্ড পুরো পাঠ্য জুড়ে একাধিক অর্থ বহন করে। বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে তাদের নিজস্ব সম্পর্ক এবং বিশ্বাসকে ব্যক্ত করে। উইলসনের জন্য এই দুটো চোখ একজন সতর্ক ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করে, যিনি সব দেখছেন এবং একদিন বিচার করবেন। বিলবোর্ডটি সম্পর্কে মিকেলিসের মন্তব্য পাঠ্যের প্রধান থিমগুলোর মধ্যে একটিকে নির্দেশ করে: বাণিজ্যিকতা দ্বারা আধ্যাত্মিকতার প্রতিস্থাপন।
১৩. হলোকাস্ট (holocaust)–“হলোকাস্ট” শব্দটির অর্থ গণহত্যা বা বলি যেখানে নৈবেদ্য সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে ফেলা হয়। শব্দটি গ্রিক “হোলোকাস্টন” থেকে এসেছে, যার অর্থ “সম্পূর্ণ পোড়া”। ফিটজেরাল্ড দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে দ্য গ্রেট গ্যাটসবি লিখেছিলেন, তাই তিনি সেই হলোকাস্টের ইঙ্গিত করেননি যা আধুনিক পাঠকরা সম্ভবত ভাববে। তিনি উইলসন এবং গ্যাটসবির মৃত্যুকে একটি বলিদানের সঙ্গে তুলনা করেছেন, সম্ভবত সেই ইঙ্গিত দিতে যে তাদের ট্র্যাজেডিটি আসলে একটি আচার যা ধনী এবং শক্তিশালীদের সমর্থন করে।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন